আটশো বছরের প্রাচীন ঢাকার ঢাকেশ্বরী আজও বিরাজমান উত্তর কলকাতার কুমোরটুলিতে

দেশভাগের ইতিহাস আজও বয়ে নিয়ে যাচ্ছে দেবী ঢাকেশ্বরীর প্রাচীন মূর্তিটি। প্রায় ৮০০ বছরেরও বেশি পুরনো এই মূর্তিটি প্রথমে ছিল বাংলাদেশের বর্তমান রাজধানী ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দিরে। কিন্তু দেশ ভাগের দাঙ্গার সময় রাজেন্দ্র কিশোর তিওয়ারি ও হরিহর চক্রবর্তী দেবী মূর্তিটিকে বিশেষ বিমানে কলকাতায় নিয়ে এসেছিলেন। এখন কলকাতার কুমারটুলির ঢাকেশ্বরী মন্দিরের রয়েছে মূর্তিটি। কথায় আছে, সেন রাজা বিজয় সেনের স্ত্রী একবার লাঙ্গলবন্দ গিয়েছিলেন স্নান করার জন্য। সেখানে ফেরার পথে তিনি একটি সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন। পরবর্তীকালে সেই বল্লাল সেন রাজা হওয়ার পর যে অঞ্চলে তিনি জন্মেছিলেন সেখানে একটি মন্দির স্থাপন করেছিলেন। ঢাকেশ্বরী দেবীর মূতিটিও জঙ্গলে কাপড়ে ঢাকা অবস্থায় পেয়েছিলেন বল্লাল সেন। তাই দেবীর নাম দেওয়া হয়েছিল ঢাকেশ্বরী দেবী।

ঢাকেশ্বরী দেবীর মূর্তিটি কলকাতায় চলে নিয়ে আসার পর প্রথম দু'বছর হরচন্দ্র মল্লিক স্ট্রিটের চৌধুরী বাড়িতে দেবীর পুজো করা শুরু হয়েছিল পরে দেবেন্দ্রনাথ চৌধুরী কুমারটুলিতে জমি ও একটি বিশাল বাড়ি কিনে সেখানে দেবী মূর্তিটিকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছিলেন। দেবেন্দ্রনাথ চৌধুরী তিওয়ারি পরিবারকেই দেবীর দেখাশোনা ও পুজোর দায়িত্ব দিয়েছিলেন। ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পুজো পদ্ধতি সাধারণ বাঙালি পুজো পদ্ধতির চেয়ে আলাদা। উত্তর ভারতীয় পুজো পদ্ধতি অনুযায়ী মা দুর্গার পুজো করা হয়।

পুজোর সময় ৩টি ঘট বসে। সেই ঘটের উপর গামছা বদলে অখন্ড দীপ বসানো হয়। ঘটের গায়ে মটি দিয়ে যব লাগানো হয়। এই মন্দিরেও নবরাত্রি পালন করা হয়। সপ্তমীর পর থেকে মায়ের বঙ্গমতেও পুজো হয়। তবে এই পুজো করা হয় বৃহনান্দীকেশ্বর দুর্গা পুজো পদ্ধতি মেনে। প্রতি বছর মহাষ্ঠমীতে ভক্তদের খিচুড়ি, প্রসাদ দেওয়া হয়। এক সময়ে ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দিরের মতো এখানেও বলির প্রথা ছিল কিন্তু এখন সেই প্রথা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সন্ধি পুজোর সময় শুধু মাত্র চালকুমড়ো বলি দেওয়া হয় এখানে। তবে কলকাতার ঢাকেশ্বরী মন্দিরে শারদীয়া দুর্গোৎসব পালন করা হলেও বাসন্তী পুজো উদযাপন করা হয় না।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...