কালী কথা: বদ্যিমাতা কালী মন্দির, যে মন্দিরে গভীররাতে হেঁটে বেড়ান দেবী

শ্রীরামকৃষ্ণের জন্মস্থান হুগলি জেলা জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে একাধিক কালীক্ষেত্র। মনোহরার পীঠস্থান হুগলির বর্ধিষ্ণু জনপদ জনাইয়ে রয়েছেন মা বদ্যি কালী। তাঁর মন্দির বদ্যিমাতা কালী মন্দির নামে পরিচিত। মন্দিরটির বয়স আনুমানিক দুশো বছর। জনশ্রুতি রয়েছে, এই মন্দিরের দেবী জীবন্ত। তিনি মন্দির চত্বরে হেঁটে চলে বেড়ান। ভক্তদের মনস্কামনা পূরণ করেন। জনাইয়ের বাকসা গ্রামে এই প্রাচীন কালী মন্দিরটি অবস্থিত। 

 

দেবী কালীর মন্দিরের পাশেই রয়েছে বিশাল এক পুকুর। পুকুরটি বদ্যিপুকুর নামে পরিচিত। এই পুকুর থেকেই উঠে এসেছিলেন দেবী। জনশ্রুতি অনুযায়ী, প্রতিদিন মধ্য রাতের পর দেবী মন্দির থেকে বেরিয়ে এই পুকুরে স্নান করেন। চুল ঝারেন, চুল শোকোন। খানিকক্ষণ হেঁটে চলে বেড়ান আশপাশে। তাই রাতে এই মন্দিরে থাকা নিষিদ্ধ। রাত্রি বারোটার পর মন্দিরে আর কেউ থাকেন না। তবে অমাবস্যা তিথিতে মন্দিরে বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয়। ভক্তদের বিশ্বাস, অমাবস্যা তিথিতে দেবী তাঁদের মন্দিরে রাত্রিবাসের ছাড়পত্র দেন। 

 

এখানে দেবী কালীর নাম বদ্যিমাতা হওয়ার নেপথ্যে একাধিক কিংবদন্তি রয়েছে। একটি মত অনুযায়ী সপ্তদশ, অষ্টাদশ শতকে এই অঞ্চলে কোনও এক বৈদ্য পরিবার থাকত। সেই পরিবারের কোনও এক পুরুষ দেবী কালীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে বদ্যিপুকুর থেকে মায়ের মূর্তি উদ্ধার করে মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করেন। বৈদ্য বংশের দেবী থেকেই মা বদ্যিমাতা নামের অবতারণা। আর একটি মতে, মায়ের কাছে প্রার্থনা করলে সমস্ত রোগের নিরাময় হয়। মা বৈদ্যের মতো ভক্তদের রোগ নিরাময় করেন। তাই তিনি বদ্যিমাতা। 

 

এক সময় টালিরচালার মাটির মন্দিরে পূজিতা হতেন দেবী। এখন স্থায়ী, দালান মন্দিরে পুজো পান তিনি। দেবী সিদ্ধেশ্বরী। গর্ভগৃহে বিরাজ করে প্রস্তর মূর্তি। কষ্টিপাথরের দেবী মূর্তি চতুর্ভুজা। মা দক্ষিণা কালী এলোকেশী। গলায় থাকে মুণ্ডমালা। প্রতিদিন দেবীর নিত্যপুজো হয়। এছাড়াও প্রত্যেক অমাবস্যায় বিশেষ আরাধনা হয়। দীপান্বিতা অমাবস্যাতে বিরাট করে পুজো হয়। তখন দেবীর সামনে বলিদান করা হয়। এছাড়াও চৈত্র মাসের প্রথম রবিবার মায়ের বাৎসরিক পুজো হয়। জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন থাকে। মেলা বসে। রোগ, ব্যাধি হলে আজও দূর দূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসেন বকসার এই মন্দিরে। দেবীর কাছে রোগমুক্তির প্রার্থনা জানান। দেবী ভক্তদের স্বপ্নাদেশ দেন। সেই স্বপ্নাদেশ অনুযায়ী ওষুধ খেলে ভক্তদের যাবতীয় রোগ, ব্যাধি সেরে যায়।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...