কালী কথা: আদি কালী মন্দির

উত্তর ২৪ পরগণার নিমতায় রয়েছে আদি কালী মন্দির। জনশ্রুতি রয়েছে, এই মন্দিরের বয়স আটশো থেকে হাজার বছর। বর্তমান মন্দিরটি ১৯০৩ সালে অর্থাৎ বাংলার ১৩১০ সনে প্রতিষ্ঠা করেন বেহালার লাবণ্য চৌধুরী। বেলঘরিয়া ও বিরাটি রেলস্টেশন থেকে আনুমানিক দুই কিলোমিটার দূরে কালী টেম্পল রোডে এই মন্দির অবস্থিত। দুই রেলস্টেশন থেকে অটোতে বা বাসে বটতলা বা নিমতা কালী বাড়ি স্টপেজে নেমে মায়ের মন্দিরে আসা যায়।

এই মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত দেবী কালী ছিলেন ডাকাতদের আরাধ্যা দেবী, এমনই কাহিনি শোনা যায় স্থানীয়দের মুখে। পরে সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবার এই মন্দির ও মাতৃ মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে। জানা যায়, মন্দির সংলগ্ন জলাশয় থেকে মায়ের মূর্তি উদ্ধার হয়। শতাব্দী প্রাচীন এই মন্দিরকে ঘিরে রয়েছে অসংখ্য অলৌকিক কাহিনি। একটি কিংবদন্তি অনুযায়ী, সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারের কোনও পুরুষ স্বপ্নাদেশ পেয়ে মন্দির সংলগ্ন পুকুর থেকে উদ্ধার করেন মায়ের মূর্তি।

adi kali maa

জনশ্রুতি অনুযায়ী, সতেরো শতকে সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারের লক্ষ্মীকান্তের দ্বিতীয় পুত্র গৌরীকান্ত বিরাটি-নিমতা অঞ্চলে কাছারি বাড়ি গড়ে বসবাস শুরু করেন। সেই সময়ে জমিদারি পরিদর্শণের জন্য পালকি চেপে তিনি নিমতা দিয়ে যাচ্ছিলেন। ঘন জঙ্গলের মধ্যে মঠপুকুর নামের এক পুকুরপাড়ে তিনি বিশ্রাম নিতে পালকি থামান।পুকুরের জলে নিজের তৃষ্ণা নিবারণ করেন। সেই রাতেই জমিদার গৌরীকান্ত মা কালীর স্বপ্নাদেশ পান। পরদিন সেই মঠপুকুর থেকে চারটি কৃষ্ণবর্ণের প্রস্তরখণ্ড উদ্ধার করেন। দুটি প্রস্তরখণ্ড দিয়ে নির্মিত হয় দেবী কালীর মূর্তি। মঠপুকুরের লাগোয়া ফাঁকা জমিতে মন্দির নির্মাণ হয়। প্রতিষ্ঠিত হয় বিগ্রহ, শুরু হয় পূজার্চনা। বাকি দুটি প্রস্তরখণ্ড এখনও মন্দিরে ওঠার সিঁড়ির দুই পাশে রয়েছে। অনেকে এদের কালীর বোন বলেন। মন্দিরে ওঠার সিঁড়ির দু পাশে রয়েছে শ্রীরামকৃষ্ণ ও সারদা মায়ের সাদা প্রস্তর মূর্তি। আর একটি মতে, মঠপুকুরে জেলেদের জাল আটকে গিয়েছিল। পরে সেই কৈবর্তরা স্বপ্নাদেশ পান এবং মায়ের কথা মতো উদ্ধার করা হয় প্রস্তর খণ্ড। যা দিয়ে মূর্তি গড়া হয়।

কালী মন্দিরটি এক চূড়া স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত। আদি কালী মন্দিরটির মূল মন্দিরের সঙ্গে রয়েছে নাটমন্দির। মন্দিরের এক পাশে শিবমন্দির এবং অন্য পাশে রাধাগোবিন্দের মন্দির। মঠপুকুরের জলেই মায়ের ভোগ ও পূজার্চনার কাজ করা হত। কিন্তু এখন আর তা ব্যবহার করা হয় না। মন্দিরের বিগ্রহ দ্বিভূজা। মা, হাস্যময়ী, প্রসন্নবদনা। শায়িত শবশিবের উপরে দণ্ডায়মানা তিনি। দেবীর ডান হতে খড়্গ এবং বাম হাতে বরাভয় মুদ্রা। গলায় মুণ্ডমালা। মাথায় সোনার মুকুট। তিনি লোলজিহ্বা বিশিষ্টা। দেবী মায়ের পুজা হয় সিদ্ধকালী মন্ত্রে। সাতজন পুরোহিত পালা করে এখানে পুজো করেন। স্থানীয়েরা বলেন, মন্দিরের মা জাগ্রত। রাত্রিবেলা ধূপের গন্ধ পাওয়া যায়, নুপুরের আওয়াজ নাকি শোনা যায়।

মন্দির খোলা হয় ভোর চারটেয়, শুরু হয় মায়ের পুজো। ভোগ হওয়ার পরে মন্দির বন্ধ হয়। বিকেল চারটেয় মন্দির খোলা হয়, সন্ধ্যারতির পরে মন্দির বন্ধ হয়। মায়ের নিত্য পুজো হয়। এছাড়াও প্রতি আমাবস্যায় বিশেষ পুজো। কার্তিক মাসে কালীপুজো এই মন্দিরের প্রধান উৎসব। রাধাগোবিন্দের মন্দিরে রথযাত্রার হয় মহাসমারোহে।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...