বাংলার বুকে গুপ্ত বৃন্দাবন

বাংলার প্রাচীন রাজধানী ছিল গৌড়।  সেই গৌড়েই অবস্থিত বিখ্যাত গ্রাম রামকেলি। রামকেলি গ্রাম বিশ্বের কাছে পরিচিত পাঁচশো বছরের বেশি প্রাচীন  রামকেলী মেলার জন্য।  রামকেলিকে বলা হয় ‘গুপ্ত বৃন্দাবন’। চৈতন্য চরিতামৃতেও এর উল্লেখ রয়েছে।

রামকেলি গ্রামের এহেন নামকরণের পিছনে এক কাহিনী প্রচলিত আছে। শোনা যায়, সুলতান হুসেন শাহের দরবারে  নির্ভরযোগ্য পারিষদ রূপ গোস্বামী এবং সনাতন গোস্বামী চৈতন্যদেবের সান্নিধ্যে এসে  রাজসভার কাজ থেকে সরে যেতে চান। তিনি কৃষ্ণ প্রেমে বিভোর হয়ে বৃন্দাবনে চলে যাওয়ার  কথা জানান সুলতানকে। কিন্তু হুসেন শাহ তাঁদের ছাড়তে চান নি। কথা দেন রাজ্যে থাকার বিনিময়ে তারা যা চাইবে তাই মেনে নেবেন। সুলতানের এই কথা শুনে  দুই ভাই রূপ আর সনাতন রামকেলিকে বৃন্দাবন রূপ দেন। এই কারণে মালদহের রামকেলির মেলা বৈষ্ণবদের কাছে গুপ্ত বৃন্দাবনের মেলা নামে পরিচিত হয়ে ওঠে।

১৫১৫ সনে রূপ ও সনাতন গোস্বামীকে জৈষ্ঠ সংক্রান্তিতে বৈষ্ণব মন্ত্রে দীক্ষা দেন মহাপ্রভু।  সেই বিশেষ দিনটি মনে রেখেই প্রতিবছর আয়োজিত হয় রামকেলি মেলা। রামকেলি গ্রামে এক তমাল গাছের নীচে চার দিবস অতিবাহিত করেন চৈতন্যদেব। আজও ওই তমাল গাছের তলায় দীক্ষাপর্ব অনুষ্ঠিত হয় বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের মানুষের। জায়গাটি সংরক্ষণ করেছে রাজ্য সরকার। মহাপ্রভুর পায়ের চিহ্নও সংরক্ষিত আছে।

আরও একটি কারণে বিখ্যাত মালদহের  রামকেলি। মেলার সময়ই এখানে চলে মাতৃ পিণ্ডদান। গয়েশ্বরী বা গৌড়েশ্বরী মন্দিরে মেয়েরা মাতৃ পিণ্ড দান করতে পারেন।

 মধ্যে একমাত্র রামকেলিতে মাতৃ পিণ্ড দানের প্রথা প্রচলিত।  দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে মহিলারা পিণ্ড দান করতে আসেন রামকেলিতে।

মেলার অন্যতম আকর্ষণ হল মাতৃ পিন্ডদান। রামকেলি গ্রামের নিকটে গৌড়ের প্রসিদ্ধ ফিরোজ মিনার অবস্থান করছে।  মহামারির কারণে বাংলার রাজধানী গৌড় ধ্বংস হয়ে গেলে ১৬০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৭০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত দুশো বছর মেলা বন্ধ ছিল। পরে আবার চালু হয়।

মাতৃ পিন্ডদানের পাশাপাশি রামকেলির মেলা এখনও বিখ্যাত বৈষ্ণব সমাজের বিয়ের জন্য। বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের বিবাহে ইচ্ছুক পাত্র- পাত্রী গুপ্ত বৃন্দাবনে কন্ঠী বদল করেন।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...