ক্ষমতার দম্ভে গাছকে পর্যন্ত বন্দি করেছিল ব্রিটিশরা

পরাধীন দেশে ইংরেজ প্রভুদের চোখে ভারত ছিল ‘কালা আদমি’ আর ‘নেটিভ’দের দেশ।  জল, জঙ্গলে বাস, ম্যালেরিয়া নিত্য সঙ্গী যাদের গরিব গুর্বো কালা আদমিরা তাই কুকুরের সমান।

বিদেশি ক্লাবে তাই ব্রিটিষ প্রভুরা লিখে রেখেছিল  ‘ক্লাবে ভারতীয় এবং কুকুরদের প্রবেশ নিষেধ।’ ভারতে ব্রিটিশ ইতিহাস তাই গুলি-চাবুক-রক্ত ঝরার ঘৃণার ইতিহাস। কোনও ভারতীয় ভুলতে পারে না সেই নৃশংস অত্যাচার। কত শত মানুষ শহীদ হয়েছে। স্বাধীনতার জন্য ঘরছাড়া হয়েছে কতজন তার সব খবর পরিসংখ্যানে মেলে না।

IMG-20231124-WA0009

ব্রিটিশ ক্ষমতার দম্ভ এতটাই ছিল যে তারা গাছকেও ছাড়েনি। গাছকে পর্যন্ত বন্দি করেছিল ইংরেজ পুলিশ।শিকল দিয়ে আস্ত একটি বটগাছকে বেঁধে ফেলেছিল তারা। আজও সেই অবস্থাতেই রয়েছে গাছটি।

শিকলবন্ধ গাছ মনে করিয়ে দেয় ব্রিটিশ শাসনের রক্তাক্ত ইতিহাস। শিকল বাঁধা এই গাছটির দেখা মিলবে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনওয়া প্রদেশের লান্ডি কোটালে। গাছের গায়ে ঝুলতে থাকা সাইনবোর্ডে লেখা, ‘আই অ্যাম আন্ডার অ্যারেস্ট।’ 

১৮৯৮ সাল। অবিভক্ত ভারতের অংশ ছিল পাখতুনওয়া প্রদেশের লান্ডি কোটাল। সেখানে শিবির করেছিল ব্রিটিশ সেনা। দেশে তখনও স্বাধীনতা অ্যান্ডোলন তেমন আগ্রাসী হয়ে ওঠেনি। সেনাদের হাতে আনন্দ ফুর্তি করার জন্য অঢেল সময়। এভাবেই একদিন একটু বেশি মদ্যপান করে ফেলেছিলেন অফিসার জেমস স্কুইড। নেশার চোটে সাহেবের মনে হল, গাছটা যেন তাঁর দিকেই এগিয়ে আসছে। যেকোনও মুহূর্তে আক্রমণ করতে পারে। মনে হওয়া মাত্রই গাছটিকে গ্ৰেপ্তারের আদেশ দিলেন স্কুইড। সাহেবের মুখ থেকে হুকুম পাওয়া মাত্রই তামিল করার জন্য দৌড়ে আসে অধঃস্তন সেনারা। তারা শিকল দিয়ে গাছটিকে বেঁধে ফেলে।

তবে এই ঘটনা নেহাত নেশার খেয়াল ছিল না। স্থানীয় পাশতুন উপজাতিদের ভয় দেখিয়ে রাখতেই এই কৌশল নিয়েছিল ব্রিটিশ সেনারা। ফ্রন্টিয়ার ক্রাইমস রেগুলেশনের রূপক ছিল এই বটগাছ।

জানা যায়, গাছটি খোগিখেলি সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তির জমিতে ছিল। পরে সেই এলাকার দখল নেয় ইংরেজরা। সাহেবরা বিদায় নেওয়ার পরে মূলত আফ্রিদি সম্প্রদায়ের মানুষই থাকেন সেখানে। কিন্তু বটগাছের শিকল আর খোলেনি। স্থানীয় এবং পর্যটকদের এই গাছ হয়ে উঠেছে দর্শনীয়।  

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...