কীভাবে শ্যামাঙ্গী হলেন গৌরাঙ্গী?

কালীপুজোয় দেবী দুর্গা শ্যামাঙ্গী রূপে আসেন আর বাঙালি মেতে ওঠেন শ্যামার আরাধনায়। দুর্গা পুজোয় যেখানে জাঁকজমক জৌলুস বেশি কালীপুজোয় সেখানে রয়েছে বাঙালির অন্তরের টান। শক্তির দেবী রূপে, অশুভ বিনাশিনী রূপে পূজিতা হন দেবী শ্যামা। কিন্তু গৌরাঙ্গী কীভাবে শ্যামাঙ্গী হলেন সেই কাহিনী আমরা অনেকেই জানিনা। আজ বলব দেবী কালিকার আবির্ভাবের পৌরাণিক কাহিনী।

 

পুরাণ অনুযায়ী, স্বর্গে একবার অসুরের দল আক্রমণ করে ও অসুরের দলের পরাক্রমের কাছে দেবতারা পরাস্ত হন। এরপর স্বর্গের দখল নেয় অসুরেরা। অসুরদের প্রবল অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে দেবতারা চারদিকে পালিয়ে যান, বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপন করে থাকেন। এইরকম অবস্থায় একদিন সকলে মিলে ঠিক করলেন এই পরিস্থিতি থেকে উদ্ধারের জন্য, উপায় খুঁজে পাওয়ার জন্য মহাদেবের কাছে যাবেন।

 

তারপর সকল দেবতারা মহাদেবের কাছে গিয়ে নিজেদের বিপদের কথা খুলে বললেন, মহাদেব তখন দেবতাদের নিয়ে সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা ও ভগবান বিষ্ণুর কাছে হাজির হলেন। সমস্যা থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য সকলে মিলে তখন তাদের সমস্ত শক্তিকে একত্রিত করলেন। সকলের সম্মিলিত সেই শক্তি থেকে আবির্ভূতা হলেন আদিশক্তি দশভূজা দুর্গা।

 

kali1

 

দেবী দুর্গা অসুর বাহিনীর সাথে সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হন আর প্রচন্ড লড়াই শুরু করেন। অসুরদের মধ্যে অন্যতম শক্তিশালী অসুর ছিল রক্তবীজব্রহ্মার বরে সে হয়ে উঠেছিল অপরাজেয়। বহু বছর ব্রহ্মার তপস্যা করে এমনই একটি মোক্ষম বর লাভ করেছিল সে, যে বরের ফলে সে হয়ে উঠেছিল এক প্রকার অমর, অর্থাৎ তাকে বধ করা হয়ে উঠেছিল দেবতাদেরও দুঃসাধ্য

 

হ্যাঁ, ব্রহ্মার কাছে তপস্যা করে সে বর লাভ করেছিল যে, তার শরীরের এক ফোঁটা রক্ত ও যদি মাটিতে পড়ে তাহলে সেই থেকে নতুন এক রক্তবীজের সৃষ্টি হবে। রক্তের থেকে প্রতিমুহূর্তে নতুন রক্তবীজ সৃষ্টি হওয়ার জন্য দেবতারা কিছুতেই এই এক অসুরকে পরাস্ত করতে পারছিলেন না। এই পরিস্থিতিতে দেবী দুর্গা যখন যুদ্ধক্ষেত্রে অবতীর্ণ হলেন এবং দেখলেন রক্তবীজকে আঘাত করার সঙ্গে সঙ্গেই তার নতুন করে জন্ম হচ্ছে তখন তিনি ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে উঠলেন।

 

সেই মুহূর্তে মহাক্রোধে দেবী দুর্গা তার বুকের মাঝখান থেকে মা কালীর জন্ম দেন। এরপর মা কালী উগ্রচন্ডা মূর্তি ধরে একের পর এক রক্তবীজের সৈন্যকে হত্যা করেন এবং তাদের শরীর থেকে রক্ত মাটিতে পতিত হওয়ার আগেই দেবী তাঁর লকলকে জিভ বার করে তাদের শরীরের রক্ত পান করতে থাকেন। এই ভাবেই দেবী রক্তবীজের বংশকে সমূলে ধ্বংস করেন। রক্তবীজ ধ্বংস হল আর দেবতাগণ রক্ষা পেলেন দেবী কালিকার কৃপায়

 

kali2

 

দেবী কালিকার রক্তবীজের এই রক্ত পান করার কাহিনীর পিছনে কিন্তু আলাদাই প্রতীক লুকিয়ে আছে। আসলে ঠিক যেমনভাবে রক্তবীজের সকল রক্ত দেবী শুষে নিয়ে ছিলেন, ঠিক তেমনভাবেই দেবী এই জগতের সমস্ত অন্ধকার নিজের দেহের মধ্যে শুষে নিয়ে হন শ্যামাঙ্গী কালিকা। অন্ধকার দূর করে তিনি আলোর পথকে সুগম করেন। তাই তো দেবীর কাছে ভক্তদের একটাই প্রার্থনা, “কালী কালী মহাকালী কালিকে পাপহারিনী, ধর্মার্থে মোক্ষদে দেবী নারায়ণী নমস্তুতে।” - অর্থাৎ হে দেবী কালী, মহাকালী রূপে আপনি জগতের সকল পাপকে হরন করুন, আপনি পরম বৈষ্ণবী নারায়ণী রূপে ধর্ম ও মোক্ষ দান করুন।

 

অন্যদিকে রক্তবীজকে ধ্বংস করে দেবী গোটা সমাজকে এও বুঝিয়ে দিলেন যে, অশুভ শক্তি যতই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠুক না কেন তা কখনই অপরাজেয় নয়, অশুভ শক্তির বিনাশ নিশ্চিত

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...