ভারতীয় সিনেমার পর্দায় কৃষক-জীবন সময়ের দলিল

এক মুঠো ভাতের জন্য সব কিছু। এক মুঠো ভাতের জন্য জীবনভরের লড়াই।  ভাতের গন্ধের চেয়ে বড় সুবাস আর কিছুতেই পায় না মানুষ। দুপুরবেলা অনেক পথ হেঁটে এসে পেতে রাখা আসন আর থালায় বাড়া ভাত ভুলিয়ে দিতে পারে সব ক্লান্তি যন্ত্রণা। অন্ন তাই লক্ষ্মী। আসন সাজিয়ে তাঁকে পুজো করা হয়।

সেই লক্ষ্মীকে যারা ধরায় আনেন তারা? আবাদ তাদের নিত্য কর্ম। সন্তান স্নেহে লালন করে বীজ। প্রতিদিন দিয়ে চলে নতুন জন্ম। সোনার ফসলে ভরে যায় মাঠ। দেশের মানুষ বেঁচে থাকে ভাতে-জলে। নেপথ্যে থেকে যায় জন্মদাতারা।

প্রতিবছর ২৩ ডিসেম্বর দিনটি তাদের সম্মানে উদযাপিত হয় ভারতে। ভারতের পঞ্চম প্রধানমন্ত্রী চৌধুরী চরণ সিংহ-এর জন্মবার্ষিকী কিষাণ দিবস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। খুব কম দিনের জন্য পদে ছিলেন তিনি, কৃষকদের জন্য একাধিক হিত-প্রকল্প গ্রহণ করেছিলেন। ২০০১ সাল থেকে এই দিনটি কৃষক দিবস হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে।

ভারতের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী বলেছিলেন ‘জয় জওয়ান জয় কিষাণ’। এদেশ জওয়ানের, এদেশ কিষাণের। শত্রুর হাত থেকে দেশ বাঁচাবে সেনা আর অন্নজলে দেশকে বাঁচিয়ে রাখবে কৃষকরা। মানুষের মধ্যে এই বার্তা ছড়িয়ে দিতে হাতিয়ার করা হয়েছিল সিনেমার পর্দাকে। ছবিতে বারবার ফিরে এসেছে অনামী অন্নদাতাদের গল্প। ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে দলিল হয়ে আছে সেই সব ছবি। তার মধ্যে ৫ সেরা ছবির খোঁজ রইল নিবন্ধে

দো বিঘা জমিন- ১৯৫৩ সালে মুক্তি পেয়েছিল বিমল রায়ের ছবি ‘দো বিঘা জমিন’। বলরাজ সাহানি, নিরুপা রায় অভিনীত ভারতীয় চলচ্চিত্রে এই ছবিকে বেঞ্চ মার্ক মনে করা হয়। গ্রাম থেকে কলকাতায় এসে কীভাবে বদলে যায় কৃষক জীবন তার ঘাত-প্রতিঘাত নিয়ে এগিয়েছে ছবি। 

মন্থন- ১৯৭৬ সালে  মুক্তি পায় মন্থন'। পরিচালক শ্যাম বেনেগাল। মিল্ক কো-অপারেটিভের প্রতিষ্ঠাতা ডঃ ভির্গেশ কুরিয়েন এর দুগ্ধ সমবায় প্রতিষ্ঠার মুভমেন্টই সিনেমাটির মূল বিষয়বস্তু। চলচ্চিত্রের কাহিনি লিখেছিলেন ডঃ কুরিয়েন এবং বিজয় তেন্ডু্লকর, যৌথভাবে। এটি ভারতের প্রথম গণ-অর্থায়নের চলচ্চিত্র, যেটা তৈরির জন্য প্রায় পাঁচ লক্ষ কৃষক প্রত্যেকে দুই টাকা করে অর্থসাহায্য করেছিলেন। ছায়াছবিটি পরের বছর ১৯৭৭ সালে জাতীয় পুরস্কারের মনোনয়নে, হিন্দি ভাষায় সেরা চলচ্চিত্র, সেরা চিত্রনাট্য ও সেরা নেপথ্য গায়িকা বিভাগে প্রথম হিসেবে ঘোষিত হয়।

মাদার ইন্ডিয়া- ১৯৫৭ সালে মুক্তি পেয়েছিল মাদার ইন্ডিয়া। এই ছবি আজও ভারতীয় ছবির মাইল স্টোন। নার্গিস, সুনীল দত্ত, রাজ কুমার মূল ভূমিকায়। গ্রামের দরিদ্র কৃষক পরিবার আর এক মায়ের গল্প ছবির বিষয়। ছবির পরিচালক মেহবুব খান। শুধু ভারতীয় নয়, এই ছবি আজও বিশ্ব সেনার অন্যতম সেরা ক্ল্যাসিক ছবি হিসেবে পরিচিত। দেশে বিদেশে নানা পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছিল নার্গিস। ১৯৫৮ সালে ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার লাভ করেন এবং প্রথম ভারতীয় হিসেবে বর্তমান চেক প্রজাতন্ত্রের কার্লোভি ভ্যারি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার লাভ করেন।

পিপলি লাইফ- ২০১০ সালে মুক্তি পেয়েছিল ‘পিপলি লাইফ’। ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্র ‘নাথু’। হত দরিদ্র কৃষক পরিবার, কৃষক আত্মহত্যার ঘটনা নিয়ে এগিয়েছে ছবি। রাজনীতি, গণমাধ্যমের ভূমিকা এবং সমকালীন সময় নিয়ে মানুষের গল্প বলে এ ছবি। ছবির প্রযোজক অভিনেতা আমির খান। চিত্রনাট্য ও পরিচালনা অনুশা রিজভি।

কড়ি হাওয়া- ২০১৭ সালে মুক্তি পায় কড়ি হাওয়া। সঞ্জয় মিশ্র ও রণবীর শোরি নজরকাড়া অভিনয় সময়ের দলিল হয়ে থাকবে। ১৫ বছর ধরে বৃষ্টিহীন এক গ্রামের কাহিনি ছবির বিষয়। 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...