ঝরঝর হোক বা ঝিরঝির রশিদ ছাড়া মিথ্যে বর্ষার গানের প্লে লিস্ট

আওগে যব তুম সাজনা
অঙ্গনা ফুল খিলেঙ্গে
বরসেগা সাওয়ান...
ঝুম ঝুম কে...

নিঝুম সন্ধ্যে। ঝরঝর বৃষ্টি। তার মধ্যে মেঘের সুরে গান। সে গান কানে এলেই মনে হয় থেমে গেল ব্যস্ত পৃথিবীটা। সব ক্যাকোফনি ফিকে। ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে রিমঝিম... ঝিরঝির... মিঞা মলহারে ধুয়ে যাচ্ছে পথঘাট, ঘরের কোণ...

এমনই গান গেয়েছিলেন তিনি। একটা প্রজন্ম পুরোপুরি ভেসে গিয়েছিল সেই সুরে। প্রেম আর বর্ষার গানের প্লে-লিস্টে পাকাপাকি জায়গা করে নিয়েছে এই গান। গায়কের নাম উস্তাদ রশিদ খান।

আজ চিরতরে থেমে গেল তাঁর গান। পৌষের অপরাহ্নে ভরা মেহফিল ছেড়ে অনন্তে পাড়ি দিলেন ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের অন্যতম জনপ্রিয় এই শিল্পী। বয়স হয়েছিল ৫৬ বছর।

IMG-20240109-WA0015

গত কয়েকমাস ধরেই অসুস্থ ছিলেন। নভেম্বরের শেষের দিক থেকে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। গত কয়েক বছর ধরে প্রস্টেট ক্যানসারে ভুগছিলেন শিল্পী। সম্প্রতি তাঁর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়। সেখান থেকেই অবস্থার অবনতি শুরু। শিল্পীকে দক্ষিণ কলকাতার একটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। সেখানেই মঙ্গলবার বিকেল ৩টে ৪৫ মিনিটে প্রয়াত হলেন তিনি। রেখে গেলেন স্ত্রী, দুই কন্যা এবং এক পুত্রকে।

তাঁর আকস্মিক প্রয়াণে শোকে মুহ্যমান বাংলার সঙ্গীতপ্রেমীরা।

১৯৬৮ সালের ১ জুলাই উত্তরপ্রদেশের বদায়ূঁতে জন্ম রাশিদের।১০-১১ বছর বয়সে কলকাতা চলে আসেন রশিদ। সঙ্গীত রিসার্চ অ্যাকাডেমির স্কলারশিপ নিয়ে দাদু নিসার হুসেনের কাছে গান শেখা শুরু। সেই থেকে কলকাতাই তাঁর নিজের শহর।

ক্ল্যাসিক্যাল সঙ্গীতের সঙ্গে প্রজন্মের গান প্রেমীদের দূরত্ব দূর করতে পেরেছিলেন তিনি। মেইনস্ট্রিম ক্ল্যাসিক্যাল থেকে মেইনস্ট্রিম বলিউড সর্বত্র আছেন।

একবার কলকাতার এক বিখ্যাত মিউজিক কনফারেন্স-এ গান শুনতে গিয়েছিলেন। বসেছিলেন একেবারে সামনের সারিতে। মঞ্চে ভীমসেন জোশি। কিশোর রশিদকে দর্শকাশন থেকে তুলে পিছনের সারিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সামনের সারি সংরক্ষিত। ওখানে ভিআইপি'রা বসবেন। গানের বিধাতা যেন মুচকি হেসেছিলেন সেদিন। অনেক বছর পরে ভীমসেন জোশি সেই ছেলেটিকেই বলেছিলেন দেশের শাস্ত্রীয় সঙ্গীত চর্চার অন্যতম ভবিষ্যৎ। সেই মঞ্চেই ফিরে এসেছিলেন তিনি। মুগ্ধ দর্শকের সামনে বিখ্যাত উস্তাদ রশিদ খাঁ হয়ে।

রামপুর-শাহসওয়ান ঘরানার শিল্পী তিনি। বিখ্যাত শিল্পী এনায়েত খাঁর পৌত্র। উস্তাদ নিশার হুসেন খাঁ'র কাছে সঙ্গীত চর্চার শুরু। তারপরে উস্তাদ গুলাম মুস্তাফা খাঁ। নিসার হুসেনের কাছে কড়া শাসন আর কড়া ট্রেনিং-এ তৈরি হয়েছিল গলা। এমন গলা যা অনেক গানের ভিড়েও আলাদা করে চিনে নেয় কান। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের পাশাপাশি ফিউশন গানেও আছেন তিনি। আছেন ছবির দুনিয়াতেও। বাংলা, হিন্দি দুই ভাষার ছবিতেই। প্রথম হিন্দি ছবি 'কৃষ্ণা দ্য ওয়ারিয়র পোয়েট'। সেটা ২০০৪ সাল। ২০১২-তে বাংলা ছবি। 'বাপি বাড়ি যা'। তবে সবের মধ্যে জনপ্রিয়তম 'আওগে যব তুম সাজনা'। ২০০৭-এ জব উই মেট ছবির গান। আজও তার সুরে মোহিত মানুষ।

ভরা শাওন-এ যে তাঁর জন্ম। তাই বোধহয় মেঘমল্লার এমন প্রাণ পেত তাঁর কন্ঠে! উস্তাতজীর গানের আবেগে চিরকাল আচ্ছন্ন থাকবে শ্রোতারা। তাদের কাছে উস্তাদজী এক মৃত্যুহীন প্রাণ। নশ্বর পৃথিবী যাঁকে স্পর্শ করতে পারে না... 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...