বাংলার মেলা কথাঃ নদিয়া শান্তিপুর পৌষকালী পুজোর মেলা

শান্তিপুর- আমার রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার একটি শান্ত শহর। এখানকার তাঁত শিল্পের ভারি সুনাম। তা ছাড়াও কথায় বলে "শান্তিপুরী ভদ্রতা" - অর্থাৎ এখানকার মানুষজনের ব্যবহার এত সুন্দর যে সেটা একটা প্রবাদ হয়ে গেছে। শান্তিপুরের রাসযাত্রাও ভারতবিখ্যাত। মোটমাট শান্তিপুর খুব শান্তির জায়গা। কিন্তু রাসযাত্রা ছাড়াও শান্তিপুরের আরেকটি উল্লেখযোগ্য উৎসব হল "পৌষকালী পুজো"। এই পুজো উপলক্ষে আয়োজিত মেলা।

বন্ধুরা, আজ আমরা পৌঁছে গিয়েছি শান্তিপুরে। এই ঠাণ্ডায় সোয়েটার, টুপি, শাল, চাদর সমস্ত শীতবস্ত্র জড়িয়ে আমরা মনের খুশিতে দেখব এবং ঘুরে বেড়াব শান্তিপুর পৌষকালী পুজো মেলায়। চলুন, চট করে জেনে নেওয়া যাক এই পুজো এবং মেলা সম্পর্কে কিছু কথা।

পৌষ মাসের শেষ দিন হল মকর সংক্রান্তির দিন। হিন্দুদের কাছে পরম পুণ্য তিথি। আর এই মকর সংক্রান্তির দিনই শান্তিপুরে হয় পৌষকালী পূজা। এই কালীমাতা কিন্তু সামান্যা নন; বিশ্বের সবচেয়ে বড় দেবী প্রতিমা এই শান্তিপুরের পৌষকালী। নদিয়ার শান্তিপুরে ভাগীরথী নদীর তীরে অবস্থিত নৃসিংহপুরে কালনা ঘাটের এই দেবী প্রতিমার উচ্চতা ৫২ হাত। এখানে মা কালীর আরাধনা হয়ে আসছে গত চুয়াল্লিশ বছর ধরে।

প্রয়াগগঙ্গাসাগরের মতো শান্তিপুরের এই নৃসিংহপুরে কালনা ঘাটেও আছে গঙ্গার ত্রিধারা সঙ্গমস্থল যার কারণে শান্তিপুরও এখন নব তীর্থস্থানে পরিণত হয়েছে। প্রয়াগ ও গঙ্গাসাগরের মতো এখানেও মকর সংক্রান্তির স্নানযোগে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সাধুসন্ত এবং বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে  অসংখ্য ভক্তবৃন্দ উপস্থিত হন এই সময় এখানে, নৃসিংহপুরে কালনা ঘাটে। আর এই পবিত্র স্থানেই ভারত বিখ্যাত ৫২ হাত পৌষ কালী মায়ের পুজো হয় যে মূর্তি তৈরি করা হয় গঙ্গারই মাটি দিয়ে আবার বিসর্জনও হয় পুণ্যতোয়া ভাগীরথীর জলে। পুণ্যধাম শান্তিপুর  নৃসিংহপুরের গঙ্গাতীরে দেবী সতীর একান্ন পীঠের পূর্ণশক্তিস্বরূপা হয়ে আবির্ভূতা হন এই বাহান্ন হাত উঁচু মা কালী। পুণ্যার্থী মানুষ পুণ্যস্নানের পাশাপাশি এই সুবিশাল কালীমাতাকেও দর্শন করেন এবং পুজো দেন।

এই পুজোকে কেন্দ্র করেই প্রতিবছর টানা ১৪ দিন বিরাট মেলা বসে। মেলায় প্রচুর বাউলশিল্পী আসেন। বসে গানের আসর। তাঁরা তাদের গানে ভরিয়ে তোলেন মেলায় আসা দর্শক-পুণ্যার্থীদের প্রাণ মন। দেশের, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সাধুসন্ন্যাসীরা আসেন পুণ্যস্নান করবেন বলে।  সঙ্গে তাঁরা যাগযজ্ঞও করে থাকেন এই ভূমিতে। পুজো কমিটির পক্ষ থেকেও একাধিক উদ্যোগ নেওয়া হয় এই মেলা এবং পুজো যাতে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হতে পারে সেইজন্য। প্যান্ডেল এবং মেলা আলোয় আলোয় সেজে ওঠে।

বিশাল গেট নির্মাণ করা হয়। নাগরদোলা, আতসবাজি, চরকি, গানের আসর, পুতুলনাচ, ম্যাজিক শো - ছোটদের, বড়োদের সকলের জন্য থাকে বিনোদনের নানান আয়োজন। আর তারসঙ্গে শান্তিপুরের বিভিন্ন বিখ্যাত মিঠাই। অন্যান্য খাবারেরও প্রচুর দোকান বসে। ছোটদের খেলনা, মাটির পুতুল, কাঁচের চুড়ি, সাজগোজের সামগ্রী, ঘরকন্নার তৈজসপত্র- কম নেই কোনও আনন্দ উপকরণেরই। চৌদ্দদিন পর ভাঙে এই মেলা। শুরু হয় পরের বছরের অপেক্ষা। আমরাও শান্তিপুর মেলা দেখা শেষ করে পা বাড়াব নতুন বছরে নতুন মেলার পথে। পাঠকবন্ধুরা, নতুন বছরে সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...