ইতালির 'বার্লিন ওয়াল' ফাবিও ক্যানাভারো

এই বার্লিন ওয়াল কোনওদিন ভেঙে পড়েনি। সময়ের সঙ্গে আরও শক্তিশালী হয়েছে। তবে এই বার্লিন ওয়াল জার্মানিতে নেই, এঁর অবস্থান ইতালিতে। যাতে বহু স্ট্রাইকারের মতো ধাক্কা খেয়েছিলেন ফুটবলের রাজপুত্রও। বলছি ফাবিও ক্যানাভারোর কথা।


ইতালির নাপোলি, বিখ্যাত 'সিরি এ' দল। সেখানে তখন খেলছেন দিয়েগো মারাদোনা। আছেন সিরো ফেরারার মতো দুরন্ত ফুটবলার। সুযোগ এল প্রথম দলের সঙ্গে প্র্যাকটিস করার। সেন্টার ব্যাক ফাবিও মাঝে মাঝেই তার পা থেকে বল কেড়ে নিচ্ছিলেন। একদিন ফেরারা তাকে ডেকে বলেন, "ট্যাকল করে আমার পা থেকে বল কেড়ে নিলেও নিতে পারো, কিন্তু দিয়েগোকে ট্যাকল করতে যেও না, বল ওর পা ছাড়ে না"। কে কার কথা শোনে! সেটাই করলেন ফাবিও। ফুটবল রাজপুত্রকে ট্যাকল করলেন। সবার চোখ ফাবিওর দিকে। দিয়েগো মারাদোনার পা থেকে যে বল কেড়ে নিচ্ছে তার মধ্যে কিছু তো আছে। না হলে ওভাবে......

Fabio1

মারাদোনা কিছু বলেননি। হয়তো হীরে চিনেছিলেন। অনুশীলন শেষে নিজের জুতোজোড়া উপহার দিয়ে যান ফাবিওকে। হতভম্ব ছেলেটি হাঁ করে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলো। মারাদোনা! যার পোস্টার ওঁর দেওয়াল জুড়ে, হৃদয় জুড়ে যার নাম লেখা সে নাকি তার জুতোটা উপহার দিয়ে গেল। হাতে দিয়েগোর জুতো। ভিতরে উত্তেজনা। ঠান্ডা মাথার ছেলেটা হয়তো সেদিনই দিয়েগোর জুতো হাতে শপথ নিয়েছিল বিশ্বের সমস্ত স্ট্রাইকারের পা থেকে বল এভাবেই কেড়ে নেবে কিংবা গোলের সম্ভাবনা তৈরি হলেই তার শক্ত দেওয়ালে আটকে যাবে বিপক্ষের শট অন টার্গেট'গুলো।

Fabio2


এরপর পারমা, ইন্টার মিলান, জুভেন্তাস, রিয়েল মাদ্রিদ এবং আপন দেশ ইতালির হয়ে জার্সি পড়ে মাঠে নেমেছেন বিপক্ষের আক্রমণ দায়িত্ব নিয়ে প্রতিরোধ করেছেন ফাবিও ক্যানাভারো। সেখান থেকেই পার্মার মতো দলকে ইউয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতেন ১৯৯৮-৯৯ সিজনে। ২০০৬-০৭ এবং ২০০৭-০৮ লা লিগা চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদ। আর ইতালির অধিনায়ক হিসেবে বিশ্বকাপ জয়। সেটা তো রূপকথা। জার্মানিতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ যায় ফোরজা আজুরিদের ঘরে। সৌজন্যে ইতালির ফুটবল ফ্যানেদের পেয়ারের 'বার্লিন ওয়াল' ক্যানাভারো।

Fabio3

একজন সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার হিসাবে ক্যানাভারোর উচ্চতা কিন্তু যথেষ্ট কম ছিল। নয় বছরের ফাবিও ডিফেন্ডার হতেও চায়ই নি। ইতালির আশির দশকের যে কোনও ফুটবল পাগল ছেলে বড় হয়েছে পাওলো রোসির, মার্কো তারদেলিদের দেখে। তারা বল বিপক্ষের জালে জড়িয়ে হয়ে উঠেছেন দেশনায়ক। পরে রবার্তো বাজ্জিওদের দেখেছে। তারা কেন হতে চাইবে ডিফেন্ডার। ঢের ভালো স্ট্রাইকার হওয়া। সেভাবেই এগোচ্ছিল ক্যানাভারোর কেরিয়ার।

Fabio4

ক্লাব নাপোলিতে আসা বল বয় হিসাবে। সাইডলাইনে দাঁড়িয়ে দেখতেন তৎকালীন ফুটবল হিরোদের। ধীরে ধীরে সুযোগ আসে যুব দলের হয়ে খেলার। খেলতেন মিডফিল্ডার হিসাবে। স্বপ্ন রোসি, তারদেলির মতো ফুটবলার হওয়া। সব ঘেঁটে দিয়েছিলেন ওই যুব দলের ডিরেক্টর। তিনি ক্যানাভারোকে বলেছিলেন "ফাবিও, আমরা তোমাকে ডিফেন্ডার হিসাবে দেখতে চাই"। উচ্চতা কম, তেমন বড় চেহারাও নয়। সে কি না খেলবে সেন্টার ব্যাক পজিশনে। কিন্তু ডিফেন্সের খেলার শুরুর দিন থেকেই আত্মবিশ্বাসটা ছিল। যা বিশ্ব ফুটবলের সেরাদের তালিকায় নিয়ে যায় ক্যানাভারোকে।


তাঁর নিজের কথায়, "উচ্চতা আমার ক্ষেত্রে কখনও সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়নি। খর্বকায় বা লম্বা নয়, আমার কাছে সবসময় গুরুত্বপূর্ণ ছিলো খেলায় জেতা।" সেই আত্মবিশ্বাস তাঁকে করে তুলেছিল ইতালি সমর্থকদের আদরের "বার্লিন ওয়াল", যার পতন জার্মানির কাছে আনন্দের, আর তার শক্তিশালী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ইতালির ভরসার, ভালোবাসার।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...