ভয় নয়, ক্যানসার রোগে চাই সাধারণের সচেতনতা

কর্কট রোগ। কর্কটের মতোই ভয়াবহ এই রোগ। একসময় মনে করা হত একবার কর্কটে আক্রান্ত হলে আর মুক্তির পথ নেই। কিন্তু আলো দেখাচ্ছে আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা। চিকিৎসকরা বলছেন আলো আছে। এই রোগ নিয়ে ভয় নয়, চাই সচেতনতা। রোগের লক্ষণ দেখা দিলে যত তাড়াতাড়ি তা চিহ্নিত হবে এবং চিকিৎসা শুরু হবে তত তাড়াতাড়ি হবে রোগমুক্তি। ক্যানসার নিয়ে বিস্তারিত জানালেন আনন্দলোক হসপিটালের ক্যানসার বিশেষজ্ঞ ডাক্তার রাজীব জেনা ( Dr. Rajiv Jena)।

ক্যানসার বা কর্কট রোগ আসলে কী? সে প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি জানিয়েছেন, আমাদের শরীরে যে সাধারণ কোষ আছে তার কিছু সময় পর্যন্ত বিভাজন চলে। নির্দিষ্ট সময়সীমার পর কোষের মৃত্যুও হয়। এই পুরনো কোষগুলোর জায়গায় নতুন কোষ এসে জায়গা করে নেয়। কিন্তু ক্যানসার কোষ অনিয়ন্ত্রিতভাবে বিভাজিত হয়। ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়ে চলে। ত্বকের নিচে মাংসপিন্ডের চেহারা নেয়। তার জন্য শরীরে নানা লক্ষণ ফুটে ওঠে। এই ব্যাপারটাই ক্যানসার।

একাধিক কারণে ক্যানসার হয়। আগে মানুষের গড় আয়ু যা ছিল বর্তমানে চিকিৎসা বিজ্ঞানের কল্যাণে তা অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন মানুষের গড় আয়ু ৭০-৮০ বছর।  সাধারণত বয়স যত বাড়তে থাকে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও তত বাড়তে থাকে। জিনগত কারণেও ক্যানসার হয়। যেমন BRCA জিন ব্রেস্ট ও ওভারি ক্যানসারের জন্য দায়ী। খাদ্যাভায়াস, জীবনযাত্রা, অত্যাধিক ধূমপান, মদ্যপান, ওত্যাধিক ওজন-এই সব বিষয়ও থাকতে পারে ক্যানসারের নেপথ্যে।

এছাড়া অনেক ধরনের সংক্রমণ আছে যার কারণেও ক্যানসার হয়। হেপাইটিস ইনফেকশন লিভার ক্যানসারের জন্য দায়ী। এছাড়া ভারতে তামাকের ব্যবহাররে কারণে ওরাল থেকে ইউরিনারীর মতো ১৫ ধরনের ক্যানসার হয়। দূষণ ক্যানসারের অন্যতম কারণ।

ক্যানসার থেকে ডূরে থাকতে খ্যাদ্যাভ্যাস ঠিক কতে হবে। শাক সবজি, ফল খেতে হবে। রেড মিৎ থেকে ডূরে থাকতে হবে। কারণ কোলন ক্যানসারের সম্ভাবনা। মদ্যপান, ধূমপান থেকে ডূরে থাকতে হবে। এছাড়াও ক্যানসার সচেতন্তার পাঠ আগে থেকেই নেওয়া দরকার সকলে। শরীরে কোনও লক্ষণ দেখা দিলে, কোনও অংশে কোনও আকস্মিক পরিবর্তন ঘটলে, স্বাভাবিক ক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে যাতে বিলম্ব না হয় তার জন্যই এই সকলের সার্বিক ক্যানসার সচেতনতার পাঠ দরকার।

যত তাড়াতাড়ি পরীক্ষায় ক্যানসার ধরা পড়বে তত তাড়াতাড়ি রোগীর চিকিৎসা শুরু সম্ভব হবে। আর নিরাময়ও ঘটবে তাড়াতাড়ি। যা রোগী এবং রোগীর পরিবারের দুই পক্ষেরই একান্ত কামনা।

ক্যানসার প্রতিহত করতে প্রতিষেধকও চলে এসেছে। সাইভাইভ্যাল ক্যানসারের ক্ষেত্রে HPB ভ্যাকসিন আছে। যা গ্রহণে ৮০ শতাংশ ক্যানসার আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।    

যারা ক্যানসারের হাইরিস্ক জোনে আছে তাঁদের নিয়মিত পরীক্ষা দরকার। চিকিৎসা অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায় এই রোগ যততাড়াতাড়ি চিহ্নিত হয় রোগীর জন্য তা ততটাই ভাল।

ক্যানসারের চারটি স্টেজ আছে। স্টেজ ওয়ান, স্টেজ টু, স্টেজ থ্রি, স্টেজ ফোর। স্টেজ ফোরে আর লোকাল ট্রিটমেন্ট হয় না। সিসটেমিক থেরাপি, কেমো থেরাপি, টার্গেট থেরাপি, ইমিউনো থেরাপি দেওয়া হয়। 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...