আজকের দিনে ডাক্তারের ভিজিট মাত্র ১০০ টাকা!

আজকে ডক্টর'স ডে-র দিন আপনাদের এমন একজন ডাক্তারের কথা জানাবো, যিনি আজকের এই বাণিজ্যিক যুগেও নিজের সেবাব্রতর কথা ভুলে যাননি। আসলে ডাক্তারি এমন একটি পেশা, বলা ভালো পরিষেবা, যেখানে নৈতিক দিক থেকে দৃঢ় না হলে আদর্শ ডাক্তার হয়ে ওঠা যায় না। মানুষের সেবা করাই এই পেশার একমাত্র লক্ষ্য। যা এই একবিংশ শতাব্দীতে এসে বিলীন হয়ে গেছে। ডাক্তারি পড়া শেষ করে বেশিরভাগ ডাক্তারেরা রোজগারের যন্ত্র হয়ে পড়েন। কে কত বেশি রোজগার করবেন, তার যেন প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। বেসরকারি হাসপাতাল তথা নার্সিং হোমে নিজেকে নথিভুক্ত করা থেকে শুরু করে একটু পশার হলেই নিজস্ব চেম্বারে চড়া ভিজিট নিয়ে রোগী দেখা, এই সবই হল আজকের ডাক্তারদের রোজনামচা।

     ব্যতিক্রমও আছেন অবশ্যই। আমি এতক্ষণ ধরা বাঁধা গতের ডাক্তারদের কথা বললাম। এবারে সেই ব্যতিক্রম একজন ডাক্তারদের প্রসঙ্গে জানাবো আপনাদের। নিতান্তই সাদামাটা জীবনযাপনে অভ্যস্ত এই চিকিৎসক নিজস্ব পেশার পাশাপাশি মানুষের পাশে দাঁড়ানোর তাগিদেই ডাক্তারি করে আসছেন বছরের পর বছর। মাত্র ১০০ টাকা ভিজিটে রোগী দেখেন রায়গঞ্জের চিকিৎসক ডঃ জয়ন্ত ভট্টাচার্য।

    তাঁর মতে, তাঁর নিজের এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের চাহিদা অত্যন্ত কম। তাই চিকিৎসা থেকে আয় করে বিলাসবহুল জীবনের স্বপ্ন দেখেন না তিনি। সংসার প্রতিপালনের জন্য এবং নিজের পড়াশুনো চালানোর জন্য যেটুকু আয় করা প্রয়োজন, সেটুকুতেই সন্তুষ্ট থাকেন জয়ন্তবাবু। সেই কারনে এলাকার মানুষের কাছে যথেষ্ট জনপ্রিয় ডাক্তার তিনি। স্থানীয় তুলসীতলায় তাঁর বাড়ির চেম্বারে রোগীর ভিড় দেখলেই তাঁর জনপ্রিয়তা আন্দাজ করা যায়। সেখানকার সাধারণ মানুষের কাছ থেকে জানা গেছে, কোনও গরিব, দুঃস্থ রোগী এলে তাঁদের কাছ থেকে কোনও রকম ভিজিট নেন না জয়ন্ত বাবু। নিজের কাছে থাকা স্যাম্পেল ফাইল ও রোগীদের বিলিয়ে দেন। শহরের অলিতে গলিতে নাম শোনা যায় এই চিকিৎসকের। ডাক্তারি পড়ার সময় থেকেই তিনি নিম্নবর্গের মানুষের পাশে দাঁড়াতে ভালোবাসতেন। সংগঠন করতেন মাঠে ময়দানে পড়ে থেকে। কলেজ পাশ করে ডাক্তারি পেশা হিসেবে গ্রহণ করে প্রথমে ১০ টাকা, তারপর ৩০, ৪০, ৫০ করে ভিজিট নিয়ে এখন দাঁড়িয়েছেন ১০০ টাকায়।

      তবে শুধু শহরে থেকেই চিকিৎসা করা নয়, দেশ-বিদেশের বহু মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ওপর লেকচারও দিয়ে থাকেন তিনি। সম্প্রতি 'চিকিৎসা বিজ্ঞানের আধুনিক ব্যবহার ও তার নতুন পদ্ধতি' নিয়ে বেঙ্গালুরুতে এক সেমিনারে বক্তব্য রাখেন তিনি। জয়ন্তবাবু জানান, চিকিৎসা বিজ্ঞানে 'আর্ট অফ হিলিং' এবং 'আর্ট অফ কিওরিং'-এর মধ্যে পার্থক্য বোঝাটাই বর্তমানের হবু চিকিৎসকদের কাছে চ্যালেঞ্জ। তাই তিনি সুযোগ পেলেই এই ফারাকটা নতুন প্রজন্মের চিকিৎসকদের বোঝান। তিনি আরও জানান, যতদিন চিকিৎসা করবেন, ততদিন মানুষের জন্যই ভাবার চেষ্টা করে যাবেন। তাঁর মতে সুস্থ থাকা মানে স্থিত থাকা।

    এ হেন চিকিৎসক সত্যিই আজকের সমাজে উদাহরণযোগ্য। এই একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে আমরা যেখানে শুধুমাত্র আত্মকেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছি দিনের পর দিন, সেখানে জয়ন্ত বাবুর মত চিকিৎসক আমাদের অনুপ্ৰেরণা যোগান। আমরা চাইব, সামনের দিনে সমাজের অধিকাংশ ডাক্তারেরা যাতে তাঁর মত করে ভাবতে পারেন।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...