দিনাজপুরের বাহিন জমিদার বাড়িতে নাকি পুজো শুরু হত পায়রার রক্ত দিয়ে! ২০০ বছর আগের কিছু অজানা তথ্য

প্রায় বলা যেতে পারে, ২০০ বছর আগে দিনাজপুরের বাহিন জমিদার বাড়িতে শুরু হয়েছিল দুর্গাপুজো। সময়ের সঙ্গে পরিস্থিতি এখন বদলে গিয়েছে। খুঁজে পাওয়া যায় না সেই জমিদারি। কিন্তু, রয়ে গিয়েছে সেই অমূল্য বাড়িগুলি এবং পুজো। আজও হয় সেই পুরনো নিয়মেই। কিন্তু এখন এই পুজো আমজনতার হয়ে গিয়েছে।

জানা গিয়েছে, মহাষষ্ঠীর সন্ধ্যায় নাকি জোড়া পায়রার বুকের বিন্দু বিন্দু রক্তের ফোঁটায় নদীঘাটের বেদি স্নান করিয়ে মাঝি পুজোয় বসতেন কুল পুরোহিত। তারপর হিমালয় পাহাড় থেকে চুঁইয়ে আসা নাগরের জলে ঘাটের রক্ত ধুঁয়ে সন্ধ্যায় ঠাকুরদালানেই হত দেবীবরণ।

Bahin_Rajbari_in_Uttar_Dinajpur_district_24

এরপর, দেবীপক্ষের দ্বিতীয়দিন ভোরে ঢাক বাজিয়ে পরিবারের মহিলারা নদী থেকে জল ভরে মন্দিরে মঙ্গলঘট প্রতিষ্ঠা করতেন। পুরোহিতের চণ্ডিপাঠের মধ্য দিয়ে শুরু হত বাহিন জমিদার বাড়ির পুজো।

কথিত আছে যে স্বপ্নাদেশ পাওয়ার পরেই, মাঝি পুজোর পর দুর্গাপুজো শুরুর রীতি শুরু হয়েছিল বাহিন জমিদার বাড়িতে।

এই রীতি শুরু করেছিলেন এস্টেটের ঈশ্বরচন্দ্র রায়চৌধুরীর পুত্র হরেন্দ্রনারায়ণ রায়চৌধুরী।

মহা অষ্টমীতে হত মহিষ বলি। এই পুজো দেখতে বিহার থেকে প্রচুর দর্শনার্থী আসতেন। এই কয়েকটা দিন জমিদারবাড়িতে সবার প্রবেশ মঞ্জুর ছিল।

কলকাতার নামী শিল্পীরা সপ্তমী থেকে নবমী নাটক ও যাত্রা পরিবেশন করতেন।

তারপরেই, দশমীর ভোর থেকে দুর্গাদালানের পাশে বিস্তৃত মাঠে বসত মেলা। দশমী সন্ধ্যায় মেলা শেষ করে মায়ের বিসর্জনের আয়োজন শুরু হয়ে যেত। জমিদার বাড়ির বধূরা মুখে পান সুপারি ছুঁইয়ে বিদায় জানাতেন মাকে।

অবিভক্ত দিনাজপুরের রায়গঞ্জ শহর থেকে প্রায় দশ কিলোমিটার দূরে নাগর নদীর পাড়ে বাহিন জমিদারি এস্টেট। যুগের সাথে সময় পাল্টেছে। ক্ষয় হয়েছে জমিদার বাড়ি। এমনকি, বারান্দাওয়ালা ঘরগুলোর পলেস্তারা খসেছে এবং ফিকে হয়ে গিয়েছে রঙ।

জানা গিয়েছে, পুজো ঘিরে কলকাতা থেকে প্রথিতযশা শিল্পীরা গান বাজনার জলসা বসাতেন। আসর চলত টানা চারদিন। পুজোকে কেন্দ্র করে নাটকের দল তৈরি করা হয়েছিল। সত্তর দশক পর্যন্ত জমিদারের উত্তরসুরীদের তত্ত্বাবধানে দেবী আরোধনার আয়োজন হত। কিন্তু প্রায় চার দশক ধরে এটা বারোয়ারী পুজোয় পরিণত হয়েছে।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...