এবার বাংলায় চালু হতে চলেছে ‘ডায়াল ১০৮' ইমার্জেন্সি অ্যাম্বুল্যান্স সার্ভিস। এই পরিষেবা পশ্চিমবঙ্গতেও চালু করার আর্জি জানানো হয়েছিল। এখন বেসরকারি পার্টনার বা সংস্থাদের বাছাই করে পুরোদমে কাজ শুরু হয়েছে বাংলাতে।
দেশের মধ্যে প্রথম ডায়াল ১০৮ পরিষেবা চালু হয় ২০০৫-এর ১৫ অগাস্ট, অন্ধ্রপ্রদেশে । এরপর কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী অম্বুমণি রামাদোসর ২০০৭ সালে উদ্যোগ নিয়ে মধ্যপ্রদেশ ও তার পর একের পর এক রাজ্যে ডায়াল ১০৮ পরিষেবা চালু করেন।
বর্তমানে দেশের অন্তত ২০টি রাজ্যে পিপিপি মডেলে পাওয়া যায় এই পরিষেবা। যার মধ্যে রয়েছে গুজরাট, অসম, ছত্তিসগড়, গোয়া, হিমাচল প্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, কর্ণাটক, কেরল, মহারাষ্ট্র, মেঘালয়, ওডিশা, পঞ্জাব, রাজস্থান, সিকিম, তামিলনাড়ু, তেলঙ্গানা, উত্তরপ্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডের মতো রাজ্যগুলির পাশাপাশি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল দাদরা, নগর হাভেলি এবং দমন ও দিউ।
ডায়াল ১০৮ ইমার্জেন্সি অ্যাম্বুল্যান্স সার্ভিস বেসরকারি সংস্থার কর্ণধার জিভি রামানা রাও। তিনি পশ্চিমবঙ্গে এই অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা চালু হওয়ার প্রসঙ্গে বলেছেন, যে তিনি আশা করছেন পশ্চিমবঙ্গে এই ব্যবস্থা আগামী ৩-৬ মাসের মধ্যে চালু হয়ে যাবে। দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ পেরিয়েছে ১৪ জুন। স্বাস্থ্য ভবনে এখন এই দরপত্র নিয়ে কাজ চালাচ্ছে। স্বাস্থ্য কর্তারা আশা করেন যে সাপে কাটা থেকে শুরু করে হার্ট অ্যাটাক কিংবা স্ট্রোকের মতো ভয়ংকর পরিস্থিতি কিম্বা ঘূর্ণিঝড়ের মতো দুর্যোগের সময়ে বহু মানুষের প্রাণ বাঁচবে এই পরিষেবার কল্যাণে। কিছুদিন আগে যখন ঘূর্ণিঝড় ‘বিপর্যয়’ গুজরাট উপকূলকে একেবারে তছনছ করে দিয়েছিল, তখন সেখানে হাজারও দুর্গতের প্রাণ বাঁচিয়েছে এই ‘ডায়াল ১০৮ অ্যাম্বুল্যান্স সার্ভিস। ওই একই পরিষেবার দৌলতে তামিলনাড়ুতে ফি বছর অন্তত ২০০ শিশু ভূমিষ্ঠ হয়েছিল এই অ্যাম্বুল্যান্সে।
সরকারি হিসেব মতো এই কয়েক বছরে প্রায় ১৫ লক্ষ প্রাণ বাঁচিয়েছে এই পরিষেবা। ফলে বাংলাতেও এই পরিষেবা চালু হলে সাধারণ মানুষেরা অনেক সুবিধা লাভ করবেন।
স্বাস্থ্য ভবনের কর্তারা জানাচ্ছেন যে এই পরিষেবা চালু করার জন্য রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য মিশনের প্রায় ৩৩ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ করা হবে। বেসরকারি সংস্থার হাতেই এই পরিষেবার ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার দায়িত্ব থাকবে ।
এই প্রসঙ্গে ইমার্জেন্সি মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অনীশ বন্দ্যোপাধ্যায় ও তমরীশ কোলে জানিয়েছেন যে পশ্চিমবঙ্গে এই পরিষেবা চালু হলে তা নানা রকমের দুর্যোগের সময়েবা কোন সমস্যা হলে, এটি সাধারণ মানুষের অনেক উপকারে আসবে। যদিও তারা পরামর্শ দেন যে এই পরিষেবা চালুর আগেই চিকিৎসক ও নার্স-সহ বেশ কয়েক জন স্বাস্থ্যকর্মীর ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট নিয়ে প্রশিক্ষণ প্রয়োজন কারণ রোগী পরিবহণের চেয়েও হাসপাতালে পৌঁছনোর আগে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসা বেশি জরুরি। ফলে, এটা মাথায় রেখেই বিশেষ ব্যবস্থা নিচ্ছে স্বাস্থ্য ভবন।
জানা গিয়েছে, এই অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা রাজ্যে চালু হলে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ক্ষেত্রে রক্তবাহিকায় জমে থাকা রুট গলানোর ইঞ্জেকশন থেকে শুরু করে সাপে কাটার অ্যান্টি স্নেক ভেনম সিরাম কিংবা স্যালাইন, অক্সিজেন, ক্যাথিটার সব রকমই ব্যবস্থা করা হবে। তাই আশা করা যায়, এই ডায়াল ১০৮ ইমার্জেন্সি অ্যাম্বুল্যান্স সার্ভিস আগামী দিনে অসংখ্য প্রাণ বাঁচাবে ।