ভারতীয় চলচ্চিত্রের সর্বোচ্চ সম্মান ‘দাদাসাহেব ফালকে’ পাচ্ছেন বিগ-বি

ভারতীয় চলচ্চিত্রের জনক দাদাসাহেব ফালকে’র প্রতি সম্মান জানিয়ে প্রতিবছর চলচ্চিত্রের বিশিষ্টদের ‘দাদাসাহেব ফালকে’-এর বিশেষ সম্মানে ভূষিত করা হয়। ১৯৬৯ থেকে এ পুরস্কার চালু হয়েছে। সত্যজিৎ রায়, রাজকাপুর, গুলজার, পৃথ্বীরাজ কাপুর, শ্যাম বেনেগাল, শশী কাপুর, বিনোদ খান্নার মতো প্রখ্যাত চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বদের এ সম্মান প্রদান করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ভারতীয় চলচ্চিত্রের ৪৯ জনকে এই দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হলেন বলিউড শাহেনশা- অমিতাভ বচ্চন। পদ্মভূষণ, পদ্মশ্রী আগেই পেয়েছিলেন, এবার তাঁর মুকুটে যোগ হলো আরও একটি পালক।

কেন্দ্রীয় তথ্য সম্প্রচারমন্ত্রী প্রকাশ জাভদেকর মঙ্গলবার টুইট করে এ খবর জানিয়েছেন। তিনি তাঁর অফিসিয়াল টুইটার হ্যান্ডেলে লেখেন, ‘লিভিং লিজেন্ড, অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন দুই প্রজন্ম ধরে আমাদের আনন্দ ও আমাদের অনুপ্রেরণা। দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারের জন্য এই বছরে তাঁকেই বেছে নেওয়া হয়েছে। পুরো দেশ এবং আন্তর্জাতিক মহল এ খবরে খুবই খুশি। তাঁকে জানাই আমার আন্তরিক অভিনন্দন।’  অমিতাভের একটি ছবি দিয়ে মন্তব্যটি তিনি প্রধানমন্ত্রী এবং অমিতাভ বচ্চনকে ট্যাগ করেন।

এর আগে হিন্দি চলচ্চিত্রজগতে অবদানের জন্য ১৯৮৪ সালে ভারত সরকার অমিতাভ বচ্চনকে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করে। এ ছাড়া ২০০১ সালে পদ্মভূষণ এবং ২০১৫ সালে পদ্মবিভূষণ পুরস্কার পান অমিতাভ। এ ছাড়া নানা পর্যায়ে অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন অমিতাভ। তার মধ্যে রয়েছে চারটি শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং ১৫টি ফিল্মফেয়ার পুরস্কারসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক পুরস্কার। ফিল্মফেয়ারে অভিনয়ের জন্য প্রদত্ত পুরস্কারের বিভাগে সর্বাধিক মনোনয়ন পাওয়ার রেকর্ড রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। বিশ্ব চলচ্চিত্রে তাঁর অনন্য কর্মজীবনের স্বীকৃতি হিসেবে ২০০৭ সালে ফ্রান্স সরকার তাঁকে ফ্রান্সের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘লেজিওঁ দ নরের নাইট’ উপাধিতে ভূষিত করে। ১৯৮০-এর দশকে তিনি রাজনীতিতে প্রবেশ করেন এবং ১৯৮৪ থেকে ১৯৮৭ পর্যন্ত ভারতীয় সংসদে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ছিলেন।

উত্তর প্রদেশের এলাহাবাদের এক হিন্দু-শিখ পরিবারে অমিতাভ বচ্চনের জন্ম। তাঁর বাবা হরিবংশ রাই বচ্চন একজন নামকরা হিন্দি কবি ছিলেন। তাঁর মা তেজি বচ্চন ফয়সালাবাদের (এখন পাকিস্তানে) এক শিখ-পাঞ্জাবি। ভারতের স্বাধীনতাসংগ্রামের অবিস্মরণীয় শব্দ ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’–এর অনুপ্রেরণায় বচ্চনের প্রথম নামকরণ হয়েছিল ইনকিলাব। পরে তাঁর নাম বদলে রাখা হয় অমিতাভ।

কেরিয়ারের শুরুর দিকে ১৩টি ছবি ফ্লপ করার পর প্রথমে ‘দিওয়ার’ এবং পরে ‘জঞ্জির’ সুপার হিট হওয়ায় আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। জয়া ভাদুড়ীর সঙ্গে ‘জাঞ্জির’, ‘অভিমান’, ‘মিলি’, ‘শোলে’, হেমা মালিনীর সঙ্গে ‘নসিব’, রেখার সঙ্গে ‘মুকাদ্দর কা সিকান্দর’, ‘মিস্টার নটবরলাল’, ‘সিলসিলা’, ‘কাভি কাভি’, জিনাত আমনের সঙ্গে ‘ডন’, ‘পুকার’, ‘গ্রেট গ্যাম্বলার’, মৌসুমী চ্যাটার্জির সঙ্গে ‘মাঞ্জিল’, রাখীর সঙ্গে ‘অনুসন্ধান’, শ্রীদেবীর সঙ্গে ‘আখরি রাস্তা’, জয়াপ্রদার সঙ্গে ‘শরাবি’, ‘লাওয়ারিশ’, স্মিতা পাতিলের সঙ্গে ‘শক্তি’, ‘নামক হালাল’, পারভীন বাবির সঙ্গে ‘দিওয়ার’, ‘কালিয়া’, ‘অমর আকবর অ্যান্টনি’, কিমি কাতকারের সঙ্গে ‘হাম’, শর্মিলা ঠাকুরের সঙ্গে ‘ফারার’ কিংবা সায়রাবানুর সঙ্গে ‘জমীর’- সত্তর দশকে প্রায় সব নায়িকার সঙ্গেই কাজ করেছেন তিনি। একটা সময় অমিতাভ বচ্চন ছিলেন পরিচালকদের আস্থা, এমনকি এখনও তাঁর ‘স্ক্রীন প্রেজেন্স’ ম্যাজিকের মত কাজ করে দর্শক-হৃদয়ে।

প্রসঙ্গত, অমিতাভকে শেষ দেখা গিয়েছে সুজয় ঘোষের ‘বাদলা’ ছবিতে। এই মুহূর্তে তিনি ব্যস্ত সুজিত সরকারের আগামী ছবি ‘গুলাব সিতাব’-তে।

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...