গরমে চাই সুতির সাতরকম

খেপচুরিয়াস গিন্নির মানভঞ্জন করতে পত্নীপ্রেমী কর্তার ধারালো অস্ত্র দুইখানি সুতির ব্লাউজ আর একটি সুতির কলমকারি শাড়ি। আপিস থেকে ফিরে প্যাকেটটা গিন্নির হাতে ধরিয়ে দিলেই গিন্নির সব রাগ গলে জল। পাশের বাড়ির নিন্দুক বউদি জানার পর এক ঢোক জল গিলে বলবেনই বলবেন—“ওদের মতো সুখী আর কে আছে?”...

চেনা পরিচিত এই দৃশ্যটা তুলে ধরার একটাই কারণ, শীতের আড়মোড়া ভেঙে হাজির কষ্টের গরম। আসলে কষ্ট মনে করলেই কষ্ট। একটু মানিয়ে গুছিয়ে চললে শীতের মতো গরমটাও এনজয় করা যায় বৈকি। হালকা-পাতলা পোশাকে, গোগো গ্লাসে আর মাথা জোড়া টুপিতে মাথা ঢেকে দিব্যি জমে ওঠে ফ্যাশন সামার ফ্যাশনের শেষ থেকে শুরু সুতিই পরম গুরুসুতির মতো আরাম অন্য কিছুতে আছে? পয়লা বৈশাখ এলে তাই সুতির পোশাক কেনার হিড়িক লেগে যায় ঘরে ঘরে। গ্রীষ্মের দাবদাহ থেকে বাঁচতে সুতি ছাড়া গতি নেই যে...

আর এই সুতি বলতে আমরা যা বুঝি তার থেকেও নরম ও মিহি বস্ত্রের নাম মলমল। মলমল প্রসঙ্গে বলতে গেলে একটু তো পিছনে যেতেই হয়। ইরাকের কোনও এক পুরনো বাণিজ্যিক প্রাণকেন্দ্রের নাম ছিল মসুল। সেখানকার তৈরি সুতি বা  মলমলের কাপড় আমদানির দরুন ইংরেজরা তার সযত্নে নাম দেয় ‘মসলিন’। আর এই মসলিনের সর্বশ্রেষ্ঠ ও উন্নততর মান আজও বজায় রেখে চলেছে এই মলমল। যে কোনও ঋতুতে সুতির কদর সবার আগে। ঘরে-বাইরে, অফিস-কাছারিতে, উৎসব-অনুষ্ঠানে মলমল তথা সুতিরই জয়জয়কার তা বলাই বাহুল্য।

প্রমীলাবাহিনীর শাড়ি, সালোয়ার, কুর্তি, টপ, ট্রাউজার, র‍্যাপার, মেখলা থেকে শুরু করে পুরুষদের শার্ট, কার্গো, ফতুয়া, পাঞ্জাবি কিংবা শিশুদের নানা বাহারের পোশাক- সুতির সাম্রাজ্য বহুদূর বিস্তৃত। অস্বীকার করার উপায় নেই, ট্রেন্ডি ফ্যাশনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এককালের হ্যান্ডলুম মিলের বিবর্ণ সুতি এখন শপিং মলের ফ্যাশন স্টোরের হ্যাঙ্গার থেকে ম্যানিকিনে। সত্যি কথা বলতে গেলে সুতি ছাড়া ফ্যাশন জমে না।

প্রসঙ্গত, সম্রাট আকবরও নাকি একসময় মজেছিলেন মলমলে। মলমলের আংরয়েখা, শতাধিক বুননের ছড়ানো জ্যাকেট পরতে ভালোবাসতেন সম্রাট। রানিরাও সেজে উঠতেন সুতির রকমারি পোশাকে।

সুতি আসলে এমনই একটি উপকরণ যা যে কোনও ঋতুতে আরাম দেয়। গ্রীষ্মে পরলে গরম কম লাগে, শীতে একটূ মোটা ধরনের সুতির পোশাকে ঠাণ্ডা কম লাগে। বর্ষায় সুতি শুকোতে সময় বেশি লাগে বলে অনেকে এড়িয়ে চলেন ঠিকই, তবে এটাও ঠিক সিন্থেটিকের পোশাক ভিজে গিয়ে গায়ে লেপ্টে থাকে। সেই জায়গায় সুতির পোশাক অতটা গায়ের সঙ্গে বসে থাকে না। ফলে, অস্বস্তিতে পড়তে হয় না রাস্তাঘাটে।

রাজ্যের আবহাওয়ার কথা মাথায় রেখে সুতিকে আপন করে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। শুধু বাহারি পোশাকই কেন? রুমাল, গামছা, মোজা, অন্তর্বাস, স্কার্ফ সেখানেও তো সুতির রমরমা। এই গরমে সেগুলিকে আপন করে নিলে ক্ষতি কী?

আমাদের রাজ্যের গরমের যা বৈশিষ্ট্য তাতে অস্বাভাবিক ঘাম আর জ্বালানি-পোড়ানি দুইই হয়। তাতে সুতি ছাড়া অন্য কিছু খুব একটা আরামপ্রদ হয় না। ঘামাচি, র‍্যাশ সবেরই উদ্ভব এই সময়েই হয়। এদের সঙ্গে মোকাবিলা করতে সুতিই শক্তিশালী অস্ত্র। তাই গরমে আপন করে নিন সুতিকেই।   

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...