ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখী

আড্ডার অনুপান কি শুধুই চপ-সিঙ্গাড়ায় সীমাবদ্ধ? একেবারেই না। আজ বলব আড্ডার জগতের এমনই এক অনুপানের কথা। সে হল মিষ্টির জগতে এক অন্যতম আকৰ্ষণ - ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখী। বাংলাদেশ এসে একবার ছানামুখীর সাথে সাক্ষাৎ করবেন না তা কি করে হয়? যদিও ব্রাহ্মণবাড়িয়া কিন্তু তালের বড়া আর মসলিনের জন্যও বিখ্যাত। যাইহোক, আজ বলবো ছানামুখীর কথা।

Chhanamukhi-of-Brahmonbariya-body

ছানামুখীর জনপ্রিয়তা ও স্বাদ আকাশছোঁয়া হলেও এর আবির্ভাবের সাথে ছিল কলকাতার এক ওতপ্রোত সম্পর্ক। তাই বা বলি কি করে, এর আসল ভিত ছিল কাশীতে। অবাক হচ্ছেন? তাহলে আগে সেই কথাই বলি। প্রায় একশো বছর আগে প্রথম ছানামুখী তৈরী করেছিলেন মহাদেব পাঁড়ে, তিনি ছিলেন কাশীর বাসিন্দা। তার বড়ো ভাই দুর্গাপ্রসাদের মিষ্টির দোকান ছিল কলকাতায়। সেখানেই কাজ করতেন মহাদেব। হঠাৎ দুর্গাপ্রসাদ মারা গেলে মহাদেব ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মেড্ডা অঞ্চলে শিবরাম মোদকের মিষ্টির দোকানে পেলেন কাজের সুযোগ এবং আশ্রয়। আর সেখানেই একদিন বানালেন এই অনবদ্য স্বাদের ছোট্ট ছোট্ট রসে ভরা ছানার চৌকো খোপ - নাম দিলেন ছানামুখী। তার হাতের গুনেই ক্রমাগত বৃদ্ধি পেল দোকানের প্রতিপত্তি ও এই মিষ্টির খ্যাতি। বাকিটা ইতিহাস। এর কিছুকাল পর দোকানের মালিক শিবরাম মৃত্যুর আগে দোকানটি মহাদেবকে দিয়ে যান। আর আজও সেই দোকান জনপ্রিয়।

চারকোনা, ছোটো, হাল্কা খাঁটি দুধে তৈরী এই ছানামুখী দেখে এ বাংলার ছানার মুড়কি বলে ভুল করতেই পারেন, কিন্তু স্বাদের তারতম্য বেশ চমকপ্রদ। আর সে গুনেই আজও ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছাড়া বাংলাদেশের অন্যত্র এর বিশেষ দেখা মেলে না। ৬০ লিটার দুধ আর ১০ কিলো চিনি দিয়ে ১০ কিলো ছানামুখী বানানো যায়। আর সারাদিন ধরে ক্রেতার বিপুল চাহিদার যোগানে ঠিক কী পরিমান বানানো হয় তা বলাই বাহুল্য। একটু ভিন্ন স্বাদের সন্ধানে সেই গ্রাহককুলে সামিল হতেই পারেন আপনিও। গল্প করতে করতে কখন বাক্স খালি হয়ে যাবে টের পাবেন না।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...