ক্যান্সারের নতুন ধরনের চিকিৎসা হবে খুবই কম খরচে

আইআইটি মুম্বাইয়ের বিজ্ঞানীরা গবেষণার মাধ্যমে ক্যান্সার রোগীর শরীরের রোগপ্রতিরোধ বাড়ানোর প্রযুক্তি আবিষ্কার করলেন। কার টি সেল ব্যবহার করে ক্যান্সার চিকিৎসার নিরাময়ের উপায় আবিষ্কার করলেন ওই বিজ্ঞানীরা। যদি সত্যি সত্যিই আমাদের দেশে এই চিকিৎসা রূপায়ন করা যায়, তাহলে তা মাত্র ১৫ লাখ টাকায় করা যাবে, যেখানে আমেরিকায় এই প্রযুক্তিতে ক্যান্সার নিরাময় করতে খরচ পড়ে ৩-৪ কোটি।

                         এই প্রযুক্তিতে জিন এবং সেল থেরাপির মাধ্যমে রোগপ্রতিরোধকারী কোষগুলিকে নতুনভাবে গঠন করা হয়, যার মাধ্যমে ক্যান্সারের কোষকে ওই নতুন তৈরী হওয়া কোষগুলি মেরে ফেলতে পারে। এই চিকিৎসা সার্জারি, কেমোথেরাপি বা রেডিয়েশন-এর থেকে অনেক কম যন্ত্রণাদায়ক। এই চিকিৎসায় আবার অসুখ ফিরে আসার সম্ভাবনা খুব কম থাকে। এই প্রযুক্তিতে লিউকোমিয়ার চিকিৎসা এই দেশে এখনও শুরু হয়নি। ভারতে যেভাবে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে, সেদিক দিয়ে দেখতে গেলে যে সীমিত সংখ্যক রোগীর  ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, তাদের সাফল্যের হার অত্যন্ত বেশি।

                          টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালের ডঃ গৌরব নারুলার সঙ্গে আইআইটি মুম্বাইয়ের বায়োসায়েন্স ও বায়োইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর রাহুল পারওয়ার এবং তাঁর টিমের সহযোগিতায় বিভিন্ন ল্যাবরেটরি টেস্ট ও ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল করার কথা চলছে। ড্র্যাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অফ ইন্ডিয়ার তরফ থেকে অনুমতি পাওয়া গেলেই আশা করা হচ্ছে আগামী বছর থেকে কাজ শুরু করা যাবে। খারঘর ক্যাম্পাসের হাপাতালে ওই সুবিধা পাওয়া যাবে। একটি বিশেষ ধরনের শ্বেত রক্ত কণিকা, যা মানুষের অন্যতম রোগপ্রতিরোধকারী কোষ হিসেবে কাজ করে, সেগুলি শরীরের ভেতরের টিউমার শনাক্ত করে সেগুলি ধ্বংস করতে সক্ষম। এগুলি টি সেল নামেও পরিচিত। কিন্তু ক্যান্সারের শেষ পর্যায়ে, ক্যান্সার সেলগুলি টি সেলের উপস্থিতিতেও নিজেদের সচল রাখতে সক্ষম হয়। এই নতুন প্রযুক্তি (কার) অর্থাৎ সিমেরিক এন্টিজেন রিসেপ্টর-এর মাধ্যমে ওই টি -সেল গুলিকে পুনরায় সতেজ করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। 'কার' হল এক ধরনের প্রোটিন, যা টি-সেলগুলিকে প্রোটিন ও এন্টিজেন সরবরাহ করে ক্যান্সার সেলগুলিকে মেরে ফেলার মত করে তৈরী করে দেবে।

                        কার-টি সেল টেকনোলজি নিয়ে পারওয়ার ও তার সহযোগী টিম দীর্ঘ ছয় বছর ধরে কাজ করছেন। এই প্রযুক্তিতে রোগীর শরীর থেকে কোষ নিয়ে তা পুনর্প্রকৌশলী (রিইঞ্জিনিয়ার্ড) এবং পুনর্চারিত (রিইনফিউস্ড) করা হয়। ভলান্টিয়ারদের এবং রোগীদের শরীর থেকে নিরাপদ কোষ নিয়ে এই পদ্ধতিতে নতুন কোষ তৈরী করে ল্যাবরেটরিতে টেস্ট করা হয় বলে জানালেন পারওয়ার। তাঁরা শুধুমাত্র একটি ইনজেকশনের মাধ্যমে গোটা প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ করেন বলে জানিয়েছেন পারওয়ার। একটি স্টার্ট-আপ ইমিউনোএডাপ্টিভ সেল থেরাপি বা ইমিউনোএক্ট যা আইআইটি বোম্বে-র সহযোগিতায় গঠিত হয়েছে, তার মাধ্যমেই পারওয়ার এবং তাঁর সহযোগী দু'জন বিজ্ঞানী এই প্রযুক্তি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছেন। একটি বেসরকারি সংস্থা ওই প্রযুক্তি ভারতের রোগীদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য এগিয়ে এসেছে বলে জানাচ্ছেন পারওয়ার। ওই সংস্থা ৩৫ লাখ টাকার মাধ্যমে উক্ত চিকিৎসা উপলব্ধ করাবে।

                    সমগ্র বিশ্বে প্রায় ৬০০টি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল রয়েছে কার-টি থেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা করার। তার মধ্যে বেশিরভাগই চিনে অবস্থিত। অত্যাধিক মাত্রায় খরচসাপেক্ষ এবং বিদেশে উপলব্ধ হওয়ার কারনে সাধারণ মানুষ এই চিকিৎসার নাগাল পাননা। ভারতে যদি এই নতুন প্রযুক্তির চিকিৎসা সাধারনের নাগালের মধ্যে আনা যায়, তাহলে ক্যান্সারের চিকিৎসায় যুগান্তকারী পরিবর্তন এসে যাবে তা বলাই যায়। 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...