হারানো ফেরিপথ

আচার ! আচার ! আচার !  

বাঙালির দুপুরের ঘুমের মাঝে যখন চোখের পলক খুলে আবার বন্ধ হয়, আধো আধো ঘুমে অজান্তেই একটি দুষ্টু বাচ্চা যখন কড়িকাঠে তাকিয়ে খেলার স্বপ্ন দেখে তখনই যেন ডেকে উঠতো আমার ফেরিওয়ালা। সুর করে, বাচ্চাদের মনের গভীরে চলে গিয়ে বের করে আনতে চাইত। বাচ্চারা ঘুমেরে ভান করে পড়ে  থাকতো মায়ের আঁচলে  শুধু সুরের ডাক শোনার জন্য। ডাক শোনা হলেই দরজা খুলে তাকে খুঁজতে হবে। এক মুহূর্ত দেরি করলেই হাতছাড়া। কত ঝক্কি বলুন তো দেখি ? একটা বাচ্চারর পক্ষে এতো কিছু সামলে ওঠা কি সম্ভব ? মাকে মানানো, ফেরিওয়ালাকে খোঁজা, তাকে ডাকা, সবচয়ে দামি বস্তুটার দিকে চোখ গেলেও , মায়ের চোখরাঙানি খেয়ে সেই সস্তা জিনিস নিয়ে প্রানভরে খাওয়া। কত দায়িত্ব বলুন দেখি ?

feri-1

কোথায় আমার সেই ফেরিওয়ালা? ডাক দেয়না কেন যখন বড়বেলার বিছানায় এখনো ঘুমের ভান করে পরে থাকি। এখনো যখন বাঙালির দুপুরের সুখের ঘুম আমার চোখে আসে না তখন সুরের ডাক পড়ে না। মনে পড়ে আমার আচারওয়ালাকে, সুর করে তার ডাক আর সেই চালতা, তেঁতুল, কুল। সেই স্বাদ আর পাবো না সত্যি। মনে পড়ে খেলনাকাকুকে লাল রঙের ছোট ফুটবলটাই বেছে নিতাম চিরকাল, বায়না ধরতাম খেলনাবাটির, না দিলে কেঁদেই ভাসাতাম। সেই কষ্ট যে কি কষ্ট কি বলবো মশাই। ওইটুকু বাচ্চার প্রথম মন ভাঙার কষ্ট।

feri-2

দেখা হয়ে ওঠে না তাদের এই বড়বেলায়। হঠাৎ হয়তো উত্তর কোলকাতার কোনো অলিগলিতে সাক্ষাৎ হয়ে যায়। কিনে নি ফটাফট , কারেন্ট নুন আরো কত রঙের ছেলেবেলা। স্বপ্ন কিন্তু এখনো দেখি শান্ত দুপুরে আমাদের ছেলেবেলার ফেরিওয়ালা ,

বাঁশিওয়ালা আর গানওয়ালা

ছেলেবেলার সেই বেহালা বাজানো লোকটা

চলে গেছে বেহালা নিয়ে , চলে গেছে গান শুনিয়ে ,

 এই পাল্টানো সময় ফিরবে কি ফিরবে না জানা নেই  ...

  গানওয়ালা আরেকটা গান গাও

  আমার আর কোথাও যাওয়ার নেই , কিচ্ছু করার নেই

feri-3

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...