কালী কথা: নৈহাটির ব্রহ্মময়ী কালী মন্দির

দেবী কালী কেবল মৃত্যুর দেবী নন, কেবল সংহারিণী নন তিনি সৃষ্টির দেবীও বটে। আর সৃষ্টির দেবী বলেই তিনি ব্রহ্মময়ী।

পরম ব্রহ্মের শক্তি তাঁর মধ্যে নিহিত। ব্রহ্মের দ্বারা পরিপূর্ণ তিনি, তিনি নিজেই পরম ব্রহ্মের প্রকাশ। সৃষ্টি, স্থিতি ও লয়ের প্রতীক। নৈহাটির পতিতপাবনী গঙ্গার তটেই রয়েছে দেবী ব্রহ্মময়ীর মন্দির। যেন মন্দির ছুঁয়ে প্রবাহিত হয় গঙ্গা।

 

নৈহাটি ফেরীঘাট থেকে অনতিদূরে অরবিন্দ রোড থেকে বাম দিকের গলিতে রয়েছে এই মন্দির। সেখানে বিরাজ করেন দেবী ব্রহ্মময়ী। মন্দিরের বয়স প্রায় ষাট বছর। তন্ত্র সাধক হরিনারায়ণ চক্রবর্তীই এই দেবীর পুজো করতেন বলে জানা যায়। প্রথমে ছিল দেবীর মৃন্ময়ী মূর্তি। পরে মাটির মূর্তি বদলে কষ্টিপাথরের মূর্তি স্থাপন করা হয়। সেই বিগ্রহই পূজিত হচ্ছে। এই মন্দিরে পঞ্চমুণ্ডের আসন রয়েছে। সাধক হরিনারায়ণ মন্দির তৈরির সময় পঞ্চমুণ্ডের আসন স্থাপন করেন। তার উপর মাতৃমূর্তি প্রতিষ্ঠা করে তিনি দেবীর সাধনা করতে বলে জানা যায়। 

 

আর একটি মতে, ১৯৬৮ সালের আগে জনৈক রামধন চক্রবর্তী নামে এক কালীভক্ত নৈহাটির গঙ্গার তীরে একটি আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর বেশ কিছু শিষ্য ছিল। তিনি জয়গুরু নামে পরিচিত ছিলেন। রামধন চক্রবর্তীর মৃত্যুর পর তাঁর শিষ্যরা ব্রক্ষ্মময়ী কালী মায়ের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন। সাতের দশকে স্থায়ী মন্দির তৈরি হয়। ব্রহ্মময়ী মন্দিরে দেবীর পুজো হয় তন্ত্রমতে। মায়ের ভোগে মাছ দেওয়া হয়। মন্দিরে বলিদানের রীতিও রয়েছে। মন্দিরে নিত্যপুজো হয়। দেবী মূর্তি চতুর্ভুজা। চার হাতে থাকে খড়্গ, মুণ্ড এবং বরাভয় ও অভয় মুদ্রা। দেবীর পায়ের তলায় থাকেন শিব। 

 

এছাড়াও প্রতি সপ্তাহে শনিবার এবং মঙ্গলবার বিশেষ পুজো হয়। ভক্তদের ভিড় জমে। প্রতি মাসে আমাবস্যা তিথিতে সমারোহে দেবীর পুজো হয়। দীপান্বিতা অমাবস্যায় সাড়ম্বরে দেবীর পুজো হয়। প্রতিবছর পৌষ মাসে অন্নকূট উৎসব আয়োজিত হয়। বিশেষ বিশেষ তিথিতে এই মন্দিরে বিশেষ উৎসব ও পুজো হয়। কালী মন্দিরের পাশেই রয়েছে শিব মন্দির।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...