বাঙালি হেঁশেলের ‘মসিহা’

“রাঁধিল পুতিকা শাক দিয়া ফুলবড়ি
চুয়া চুয়া ঘৃতে ভাজা করে পলাবড়ি”
শীতের রোদ পাকতে শুরু করার আগেই শুরু হয়ে যায় রান্নাঘরের দৌড়াদৌড়ি। ডাল বাছার তাড়া। দিন দুই পরেই যেন পরব লাগবে।
ডালের ডাল আলাদা করে ঝেড়ে বেছে ভিজিয়ে রাখতে হবে রাত ভোর। দিনের সূয্যি উঠলেই নেমে আসবে হেঁশেলের শিল দেবতা। স্নান সেরে ধোয়া কাপড়ে বাটা হবে ডাল। জলের মাপ যেন একচুল এদিক ওদিক না হয়।

Bori1

সে পর্ব মিটলে সোজা ছাদ কিংবা উঠোনে। হাতের পাশে কাক ছিপটি। নাক যেন না বোঁচা হয়!
ভাবছেন বুঝি কার?
কার আবার বড়ির!

বাঙালি হেঁশেলের ভীষন আপন। নিজস্ব সংস্কৃতির অঙ্গ। ঝোলে-ঝালে-অম্বলে তার সমান উপস্থিতি।

শীতের মরসুমে পিঠে পার্বণের সঙ্গে শুরু হয়ে যায় অন্য এক ব্যস্ততা।
দুগ্গা পুজোর মরসুম শেষ হতে না হতেই বাতাসে হিমের পরশ। মিঠে রোদের তেজ কাঁচা বড়িকে পাকা করতে অতি উপাদেয়।
মুসুর, বিউলি, মাসমলাই, মটর ডালের বড়ি দেওয়া হয়। অঞ্চল ভেদে বড়ির নাম আর স্বাদ দুই বদলায়।

বাটা ডাল হবে সান্দ্র। থকথকে। তেল মাখানো থালার ওপর তবেই বসবে। ডালের ওপর নির্ভর করে মশলা। আঙুলের কায়দায় আঁকা হবে শঙ্কু আকারের বড়ি। রোদে শুকিয়ে শুকনো বয়ামে রাখা হয়। আয়ু বেশ কয়েক মরসুম।

Bori2

বড়ি নানা রকমের হয়। অনেক সময় বড়িতে চালকুমড়ো মেশানো।
বড়ির সাম্রাজ্যে সেলিব্রিটি হল গয়না বড়ি। তার বিশ্ব জোড়া নাম। পশ্চিম মেদিনীপুরের বিখ্যাত। ইতিমধ্যেই সরকারিভাবে শিল্পের মর্যাদা পেয়েছে। বাঙালি সংস্কৃতির সম্পদ।

শীতকালে মূলত গ্রামাঞ্চলে বাড়িতে বাড়িতে পিঠের মতোই বড়িরও পাববন লেগে যায়। শহরেও বাড়িতেও কিছু কিছু দেখা মেলে। বিয়ে হয় বড়ির। চলতি কথায় ‘বুড়োবুড়ির বিয়ে’।
নতুন কুলোয় নতুন কাপড় বিছিয়ে পোস্ত ছড়িয়ে দেওয়া হয়। তাতে বসে নাক তোলা দুই বড় বড়ি। ধান, দুব্বো সিঁদুরে বরণ করে বিয়ে হয় বুড়োবুড়ির।

আমিষ হোক, বা নিরামিষ, টক হোক বা ঝাল সবের সঙ্গেই মানিয়ে যায় বড়ি। ট্যালট্যালে ঝোলটা আর ট্যালট্যালে থাকে না যদি বড়ি সঙ্গে থাকে। বড়ি আসলে রান্নাঘরের ত্রাতা। হঠাৎ অতিথি আসুক বা জল-ঝড়ের দিন, হেঁশেলের হাল যাই হোক, বড়ি ঠিক বাঁচিয়ে দেবেই!

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...