মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথি। যেইদিকেই চোখ যাচ্ছে সেইদিকই বাসন্তী রঙে রঙিন। কারণ আজ বাগদেবীর আরাধনা দিবস। শ্বেতশুভ্র পোশাকে সজ্জিত বীণাপানির কাছে অর্পণ করা হয় বাসন্তী গাঁদা। তাই নামের সাথে বেশ যায় এই দিনটা। বাসন্তী পঞ্চমী বা সরস্বতী পূজার দিনেই চলুন জেনে নেওয়া যাক এই বিশেষ দিন সম্পর্কে নানান কথা।
পশ্চিমবঙ্গের তথা হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম পুজোগুলির মধ্যে একটি হল এই সরস্বতী পূজা। প্রতিবছর মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে অত্যন্ত ভক্তির সাথে পালিত হয় এই দিনটি। বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই আজকের দিনে তাদের বিদ্যালয় বা মহাবিদ্যালয় আরাধনা করে বাগ্দেবীকে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও বেশিরভাগ বাড়িতে যেখানে বিদ্যার্থীরা থাকে সেই সমস্ত বাড়িতেই অত্যন্ত আনন্দ ও ভক্তির সাথে আরাধনা করা হয় দেবীর। বর্তমানে বেশ কিছু ক্লাব সংগঠনও তাদের পাড়ায় সরস্বতী পুজোর আয়োজন করছে। বাঙালি পরিবারে শিশুর শিক্ষার শুভারম্ভ হয় এই সরস্বতী পুজোর দিনেই। সরস্বতী পুজোর পরের দিন শীতলষষ্ঠী নামে ষষ্ঠীপুজো করা হয়।
বিদ্যার বিস্তারের জন্য বাগ্দেবীর আরাধনা, কিন্তু কোথা থেকে শুরু হলো এই আরাধনা জানা আছে কি? কথিত আছে, অতীতকালে তান্ত্রিক সম্প্রদায় সরস্বতী দেবীর ন্যায় এক বেদির পূজা করতেন যার নাম ছিল বাগেশ্বরী। ঊনবিংশ শতক থেকে প্রতি মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে পরিষ্কার টুলের উপর ধোয়া কাপড় পেতে সেখানে দোয়াত ও কলম স্থাপন করে পূজা করার প্রথা চালু ছিল। তারপর থেকে এই তিথিতে ছাত্ররা তাদের শ্লেট, দোয়াত, কলম, পুঁথিপত্র পূজা ব্যবস্থা করতো। এই প্রথা বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত প্রচলিত ছিল। বর্ধমানের এক মহারাজার পূজা হতো মহা সাড়ম্বরের সাথে। সেই প্রতিমার বিসর্জন দেখার জন্য সেখানে ভিড় হতো চোখে পড়ার মতো। এই পূজা উপলক্ষে সেখানে আতশবাজি পোড়ানোর প্রথাও ছিল। বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে আধুনিক সরস্বতী পূজার প্রচলন হয়।
সরস্বতী পুজোর দিন বড়োই নস্টালজিক একটি দিন হয়ে ওঠে সমস্ত মানুষের জন্য। ছোটবেলায় একজোট হয়ে স্কুলে গিয়ে অঞ্জলি দেওয়া, তারও আগে অন্য অন্য স্কুলে গিয়ে কার্ড বিতরণ, বড্ড মনে পড়ে সেই দিনগুলোর কথা। আপনার কি মনে পড়ে ছোটবেলার কথা? যখন বাড়িতে সরস্বতী পুজোর আগে কুল খেতে বারণ করা হত। কেউই পুজোর আগে কুল মুখে তুলতে চাইতেন না পাছে মা সরস্বতী পাপ দেয়। কিন্তু সেই ধারণাও এখন বদলেছে। পুজোর অনেক আগে থেকেই লোকে কুল খাওয়া শুরু করেছে। আমিও খাচ্ছি, আপনিও খাচ্ছেন। কিন্তু ঠিক করে বলুন তো, একবারও কি মায়ের করা সেই মানার কথা সেইসময় মনে দোলা দিয়ে যাচ্ছেনা?
আধুনিকতার যুগে বদলাচ্ছে দেবী অবয়বও। ঐতিহ্যবাহী পুজোর পরিবর্তে আসছে থিমের পুজো। ঠাকুরেও হচ্ছে পরিবর্তন। একধাঁচের ঠাকুরের পরিবর্তে হচ্ছে নানারকম ঠাকুর যেমন মডার্ন সরস্বতী যার হাতে বই ও বীণার পরিবর্তে উঁকি দিচ্ছে মোবাইল ও রোদচশমা। যুগ বদলাচ্ছে সাথে বদলাচ্ছে মানুষের মন। কিন্তু আধুনিকতার জোয়ারে ভেসে গেলেও বদলায়নি বাগ্দেবীর প্রতি ভক্তি ও শ্রদ্ধা। প্রতিবছরের মতো তাই এই বছরও সমস্ত স্কুল, কলেজ, অফিসের দালান ভরে উঠছে কচিকাঁচা থেকে শুরু করে সবার ভিড়ে।