বাংলার বিখ্যাত চিলিগোল্লা

লঙ্কা আর চিনি একসাথে খেয়ে দেখেছেন? অবাক লাগছে! কিন্তু এমনই এক অদ্ভুত স্বাদের চাহিদা রীতিমতো তাক লাগানোর মতোই। আজ সেই সন্ধান দেব।

লঙ্কা চিবিয়ে ঝাল লাগলে মিষ্টির খোঁজ পড়ে। কিন্তু যদি সেই মিষ্টি হয় লঙ্কা দিয়ে তৈরী? বুঝলেন না! বলছি চিলিগোল্লা মানে ঝাল রসগোল্লার কথা। দেখতে আর পাঁচটা রসগোল্লার মতো হলেও রসের দিকে তাকালেই বোঝা যায় ফারাক। রসের মধ্যে সাঁতার কাটছে চেরা কাঁচা লঙ্কা। আর এমন দৃশ্য দেখা যাবে মেদিনীপুরের চার্চ স্কুলের সামনে অরিন্দম সাউ এর রাধাকান্ত সুইটসে। কিন্তু এর শুরু হয় কিভাবে?

শুরু হয়েছিল রাধাকান্ত সুইটসের মালিক অরিন্দম সাউ এর হাত ধরে বছর দুই আগে। যাঁদের রসগোল্লা খাওয়ার উপায় নেই বা খেলেও ভয়ে ভয়ে থাকতে হয়, তাঁদের জন্য এই চেনা খাবারটাই ঝাল ঝাল করে বানিয়ে একটু এক্সপেরিমেন্ট করার উদ্দেশ্যেই বানিয়েছিলেন এই ঝাল রসগোল্লা, তার দোকানের নাম ধরে রসগোল্লার নাম হয় রাধাকান্তের রসগোল্লা। বাঙালী একটু নতুন কিছু স্বাদ পরখ করবে না তা হয় কি! ব্যাস – তারপর থেকেই তা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। মেদিনীপুরে কেউ বেড়াতে গিয়ে ঝাল রসগোল্লা কিনছেন না, এমনটা প্রায় ঘটেই না। ঝাল রসগোল্লার দাম দশ টাকা পিস্।

chilli-rosogolla-body

এই-দু’য়ের যুগলবন্দি ঘটিয়েই এখন অবশ্য বেশ কিছু দোকানে এর প্রচলন ঘটেছে। যার অন্যতম বর্ধমানের বিখ্যাত নেতাজী মিষ্টান্ন ভাণ্ডার। এই দোকানের ঐতিহাসিক গুরুত্ব নেহাত কম নয়। স্বয়ং নেতাজী এই দোকানের মিষ্টি চেখে দেখেন, যার সাক্ষ্য আজও রয়েছে সেখানে। সেই দোকানের মালিক সৌমেন দাসের মিষ্টি নিয়ে এক্সপেরিমেন্টের এক ফল চিলিগোল্লা। তবে এর সাথে মেদিনীপুরের মিষ্টির একটু রঙে পার্থক্য আছে। এটি একটু সবুজ রঙের। এর জন্ম কলকাতার বাগবাজার রসগোল্লা উৎসবে।

এই সবুজ রং আনতে প্রথমে কাঁচালঙ্কা আর কিউই ফল মিক্সিতে পেস্ট করে মাখা হয় ছানার সঙ্গে। বাকি পর্ব সাধারণ রসগোল্লা তৈরির মতোই। এরপর পাত্রে চিলিগোল্লা রাখার পর উপরে ছড়িয়ে দেওয়া হয় চেরা কাঁচালঙ্কা। ব্যাস- রেডি চিলিগোল্লা। এখন নেতাজী মিষ্টান্ন ভাণ্ডার থেকে রোজ প্রায় ১৫ কেজি ছানার চিলিগোল্লা বিক্রি হয়। প্রতি পিসের দাম মাত্র ৬ টাকা। উপরে মিষ্টি রসে টইটম্বুর আর কামড় দিলেই কাঁচালঙ্কা! বর্ধমানের কার্জন গেট থেকে বিসি রোড ধরে কয়েকটা দোকান পেরিয়ে ডানদিকে দেখা মিলবে এই চিলিগোল্লার।

চেনা খাবারের এক অচেনা স্বাদ চেখে দেখলে নেহাত মন্দ লাগবে না। আর বলতে দ্বিধা নেই এদ্দিন চিনির ভয়ে যারা খেতে পারতেন না তারা অনায়াসেই এই অনবদ্য স্বাদের সাক্ষী হতে পারেন, সুগারের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করেই।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...