চন্দ্রযান-৩ মিশনে বীরভূম ও বাঁকুড়ার এই দুই ছেলেকে নিয়ে গর্বিত বাংলা।

এবার বাংলার বুক গর্বে ফুলে উঠেছে এই চন্দ্রযান-৩ মিশনে। একজন বীরভূম আরেকজন বাঁকুড়া। তাদের অনেক অবদান রয়েছে এবং কৃতিত্ব দিয়েছে এই মিশনে। তারা নিজেদের গ্রামবাসীদের এবং এলাকাকে আজ গর্বিত করে তুলেছে। তারা আজ তাদের স্বপ্ন সফল করেছে।

IMG-20230717-WA0005

বাঁকুড়ার কৃশানু নন্দী বরাবরই ছোট থেকেই মহাকাশ বিজ্ঞানে ঝোঁক ছিল। তার এই স্বপ্ন আজ পূরণ হয়েছে। কৃষক পরিবারের ছেলেটার নাম আজ ইতিহাসের পাতায়। ইসরোর ঐতিহাসিক চন্দ্রযান ৩ প্রজেক্টে চাঁদের মাটিতে রোভার বা রোবট গাড়ির গতিবিধির সমন্বয় ও তা নিয়ন্ত্রণের মতো জটিল বিষয়টি নিয়ে ইসরোর ইঞ্জিনিয়ারদের মধ্যেই অন্যতম ছিল কৃশানু।

তার বাড়ি বাঁকুড়ার পাত্রসায়ের থানার ডান্না গ্রামে। সেখানে তার বাবা এক কৃষক। কৃশানু উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনার পরে বিটেক করেন। এরপর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমটেক করেন তিনি। নানা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা দিয়েছিলেন তিনি। বর্তমানে ইসরোর বেঙ্গালুরুতে এখন কাজ করেন।

তার বাবা গর্বিত হয়ে এক সংবাদমাধ্যমে বলেন, “ছোট থেকেই পড়াশোনায় ছেলে ভাল। স্বপ্ন ছিল ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। এরপর পরীক্ষা দিয়ে ইসরোয় চাকরি পেয়েছে। চন্দ্রযান-৩ অভিযানে যাঁরা যুক্ত রয়েছেন তাঁদের মধ্যে কৃশানুও রয়েছেন। চন্দ্রযান-৩ অভিযান সফল হোক গোটা দেশবাসীর মতো আমরাও তাই চাইছি। সকলের পরিশ্রম যেন বৃথা না যায়।”

IMG-20230717-WA0004

কৃশানুর দিদি পেশায় প্রাথমিক স্কুলশিক্ষিকা। তার নাম দেবিকা নায়েক, তিনি বলেন, “ছোট থেকে চাপা স্বভাবের ভাই। পড়াশোনায় বরাবর ভাল রেজাল্ট করেছে। ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন ছিল ওর। তাই উচ্চমাধ্যমিকের পর ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েছে। মহাকাশ গবেষণা সংস্থায় চাকরি করবে, সেই স্বপ্নও দেখত ছোট থেকে। চন্দ্রযান-৩ অভিযান প্রজেক্টে আমার ভাই রয়েছে জেনে ভীষণ গর্ব হচ্ছে। চন্দ্রযান-৩ অভিযান সফল হলে ভাইয়ের স্বপ্নপূরণ হবে। আমরা সাফল্য কামনা করছি।”

প্রচণ্ড ব‌্যস্ততার মাঝে বেঙ্গালুরু থেকে কৃশানু জানান, “চাঁদের দক্ষিণ মেরুর মাটি ছোঁয়ার পরে রোভার বা রোবট গাড়ির গতিবিধি সমন্বয় করে নিয়ন্ত্রণ করাই এখন বড় কাজ। সেই কাজে এখন নিয়োজিত রয়েছি। দেশের কাজে অংশ নিতে পেরে গর্বিত আমি।”

অন্যদিকে, বীরভূমের মল্লারপুর থানার ময়ূরশ্বরের দক্ষিণগ্রামের গবেষক বিজয় দাইকে নিয়েও গর্বিত তার গ্রামবাসীরা। তিনি চন্দ্রযান-২ প্রকল্পে টিমের সিনিয়র বিজ্ঞানী ছিলেন, এবারও চন্দ্রযান ৩-এর মিশনে এই টিমে আছেন।

বিজয়ের বাবা নারায়ণচন্দ্র দাই পেশায় অস্থায়ী এনভিএফ কর্মী ছিলেন। সামান্য জমি চাষ করে তিন ছেলের লেখাপড়া চালিয়েছেন।

বিজয় স্থানীয় দক্ষিণগ্রাম জগত্তারিনী হাইস্কুল থেকে ২০০০ সালে মাধ্যমিকে ভালভাবে পাশ করে বেলুড় রামকৃষ্ণ মিশন থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান নিয়ে পাশ করেন। তারপরে জয়েন্ট দিয়ে কল্যাণী সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে ইলেকট্রনিক্স অ্যাণ্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বি টেক করেন। এর পরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম টেক করার সময় ইসরোর বিজ্ঞানী পদের জন্য আবেদন জানান। এরপর ২০০৭ সালে ইসরোতে বিজ্ঞানী পদে চাকরি পান বিজয়। বিভিন্ন ধরণের প্রকল্পের কাজে যুক্ত ছিলেন তিনি। চার বছর আগে সফল উৎক্ষেপণের পরেও চাঁদের মাটি ছুঁতে পারেনি চন্দ্রযান-২। বর্তমানে চন্দ্রযান ৩-এর কার্যকলাপে অন্য অনেক বিজ্ঞানীর সঙ্গে যুক্ত আছেন তিনি।

বিজয়ের বাবা নারায়ণ দাই সংবাদ মাধ্যমে বলেন, ‘‘ছেলে প্রথম থেকেই মেধাবী ছিল। বর্তমানে দেশসেবার কাজে নিযুক্ত আছে। এতে আমরা খুশি এবং গর্বিত। আমরা সকলেই চাই চন্দ্রযান ৩ ভালো ভাবে সফল হোক।’’

বিজয়ের দাদা পেশায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বিনয় দাই, তিনি বললেন, ‘‘ভাই এখন চরম ব্যস্ত। আমরাই কথা বলার চেষ্টা করেও পারিনি। তবে আমরা ও গ্রামবাসী সকলেই বিজয়ের জন্য গর্ব অনুভব করছি। চন্দ্রযান -৩ যাতে সফল ভাবে গবেষণার কাজ করতে পারে সেই কামনা করছি।’’

বাংলার মানুষ এখন তাদের এই দুই ছেলেকে নিয়ে খুবই গর্বিত এবং তারা আশাবাদী যে এই মিশন সফল হবেই।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...