চানক অন্নপূর্ণা মন্দির

২৪ টি নৌকা নিয়ে বারানসীতে তীর্থ ভ্রমণে যাচ্ছিলেন রানী রাসমনি। সঙ্গে আত্মীয় এবং পরিবার। হঠাৎ এক রাতের স্বপ্নে থমকে গেল সব পরিকল্পনা।

মাঝরাতের গভীর ঘুমে আদেশ পেলেন দেবীর। রাণীর রাসমনির দ্বারা পূজিতা হতে চান দেবী অন্নপূর্ণা।

জানবাজারের রাণীর আর তীর্থে যাওয়া হল না।

জীবদ্দশায় অন্নপূর্ণা মন্দির প্রতিষ্ঠা করে যেতে পারেননি রাণী রাসমনি।

তাঁর অবর্তমানে সেই ইচ্ছেপূরণের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন রানি রাসমণির জামাই মথুরমোহন বিশ্বাস।   

তিনি পরিকল্পনা করেছিলেন দেবী অন্নপূর্ণার মন্দির প্রতিষ্ঠার। কিন্তু তিনিও পারেননি। স্বপ্নাদেশে পাওয়া অন্নপূর্ণা মন্দির শেষপর্যন্ত বাস্তবায়িত করেছিলেন তাঁর স্ত্রী। রানি রাসমণির ছোট মেয়ে জগদম্বা দেবী।

 দক্ষিণেশ্বরে মন্দির প্রতিষ্ঠার ২ দশক পর ১৮৭৫-এর ১২ এপ্রিল রাণী রাসমনির স্বপ্নের অন্নপূর্ণা মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়। বাংলার চানকে।

 আজকের ব্যারাকপুরে। ব্যারাকপুর-টিটাগড় অঞ্চলের প্রাচীন নাম চাণক পূর্ব নাম ছিল ‘চানক’। সেই সূত্রে এই মন্দিরটি চাণক মন্দির নামে পরিচিত।

মন্দির প্রতিষ্ঠার যাবতীয় ভার নিজের কাঁধে বহন করেছিলেন মথুরমোহন বিশ্বাস এবং জগদম্বা দেবীর পুত্র দ্বারিকানাথ বিশ্বাস।

ব্যারাকপুরের এই ঐতিহাসিক মন্দিরটি বঙ্গীয় স্থাপত্যশৈলীর নবরত্ন মন্দির ধারায় নির্মিত। পঙ্খের কাজ যুক্ত ন’টি চূড়া বিশিষ্ট নবরত্ন মন্দির। সুবিশাল নাট মন্দির। ছ’টি আটচালার শিবমন্দির দেখা যায়। আছে দু’টি নহবৎখানা। এছাড়া  স্নানঘাট, ভোগের ঘর ইত্যাদি তো আছেই।

দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের আদলে তৈরি মন্দিরটি নির্মাণে যুগে খরচ হয়েছিল প্রায় তিন লক্ষ টাকা। দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের আদলে তৈরি বলে এই মন্দিরকে ‘ দ্বিতীয় দক্ষিণেশ্বর’ বলা হয়।

ছ’টি শিব মন্দির আলাদা আলাদা নামে পরিচিত। নামগুলি যথাক্রমে কল্যাণেশ্বর, কাম্বেশ্বর, কিন্নরেশ্বর, কেদারেশ্বর, কৈলাসেশ্বর, ও কপিলেশ্বর।

১৮৭৫ সালের ১২ এপ্রিল চৈত্রসংক্রান্তির দিন মন্দির উদ্বোধন হয়। অষ্টধাতুর অন্নপূর্ণা বিগ্রহ। শ্রীশ্রীশিবশক্তি অন্নপূর্ণা ঠাকুরানী নামে পরিচিত।  রূপোর পদ্মের ওপর আসীনা দেবী। একটি পদ নীচে ঝোলানো। বাম হাতে অন্নপাত্র। ডান হাতে হাতা। তাঁর সম্মুখে দণ্ডায়মান মহাদেব। 

মন্দির উদ্বোধনের দিন শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব স্বয়ং উপস্থিত ছিলেন। এই মন্দিরে চার বার এসেছিলেন এসেছিলেন তিনি। মন্দির প্রতিষ্ঠার দিন মন্দির সংলগ্ন বেলতলায় আসন গ্রহণ করেছিলেন তিনি। সেই গাছ আজও বর্তমান।

দেবী অন্নপূর্ণার নিত্য পুজো হয়। অন্নকূট উৎসব হয় কালীপুজোর পরের দিন। এছাড়া অন্নপূর্ণা পুজোর দিনও অন্নকূট হয়। মন্দিরের নিত্যসেবা ও পুজোপার্বণের ব্যয় বহনের জন্য জগদম্বাদেবী সেই সময়ে উপযুক্ত সম্পত্তি দিয়ে ‘অর্পণনামা’ করেছিলেন। সেই ‘অর্পণনামা’-র নির্দেশ অনুসারে ‘জ্যেষ্ঠানুক্রমে’ বংশের বয়োজ্যেষ্ঠকে মন্দিরের সেবায়েত হতে হয়।

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...