‘বাংলার মাটি’ হতে পারে রাজ্যসংগীত, প্রথমে এই গান ‘রাখিসংগীত’ হিসেবে পরিচিত ছিল

সম্প্রতি মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্ধ্যাপাধ্যায় এক বৈঠকে প্রস্তাব দেয় রবীন্দ্রনাথের ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’ গানটিকে রাজ্য সংগীত হিসেবে গাওয়া হবে। একটা সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রায় ঘোষণাই করে ফেলেছিলেন যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত 'বাংলার মাটি বাংলার জল' গানটিকেই রাজ্য সংগীত হিসাবে গাওয়া হবে। জাতীয় সংগীতের মতোই, রাজ্যেরও এক নিজস্ব রাজ্যে সংগীত থাক। তবে, মুখ্যমন্ত্রী চেয়েছিলেন, 'বাংলার মাটি বাংলার জল' গানটির কয়েকটি শব্দ বদলাতে। যেমন 'বাঙালি' শব্দটির বদলে 'বাংলা' শব্দের প্রয়োগ করা হবে। কিন্তু সেই প্রস্তবে অনেকের সাথেই মত মেলেনি। তাই এই বিষয়টি এখন পিছিয়ে যায়।

swarajya_2022-08_4a1fb9d8-00ac-407c-ba6b-40dc159cb6e8_Mamata_4_11zon

রবীন্দ্রনাথের এই গানটি 'বাংলার মাটি বাংলার জল' এক বিশেষ সময়ে, বিশেষ পরিস্থিতিতে রচিত হয়েছিল। অন্য রবীন্দ্রসংগীতের মতন কেবল সাহিত্যগুণে ভূষিত নয়। এই গানটির মধ্যে একটি আলাদা তাৎপর্য রয়েছে।

কিন্তু আপনি কি জানেন, এই গানের নাম প্রথমে ছিল ‘রাখীসংগীত’। রাখিবন্ধনের সঙ্গে জড়িত এই বিশেষ গানটি। কিন্তু কেন ছিল এরকম নাম? কি ছিল প্রেক্ষাপটে? কেন এই গান লেখা হয়েছিল?

রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাইপো অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর আত্মজীবনী ‘ঘরোয়া’-তে এ প্রসঙ্গে সেই সব কথা স্মৃতিচারণ করে লিখেছিলেন।

সেখানে তিনি লেখেন যে রবিঠাকুর রাখীবন্ধন উৎসব করতে চেয়েছিলেন। তিনি সবার হাতে রাখী পরাবেন। তাঁর সাথে সকল পরিবারকে যোগদান দিয়েছিলেন। সেইজন্য উৎসবের দিন সকলে সকালবেলায় পায়ে হেঁটে গঙ্গায় স্নান করে সবার হাতে রাখী পরানো হয়েছিল। তাঁকে দেখার জন্যে রাস্তার দুধারে, বাড়ির ছাদ থেকে আরম্ভ করে ফুটপাত সব জায়গায় লোকের সমাগম ছিল। বাড়ির মেয়েরা খৈ ছড়াচ্ছে, শাঁখ বাজাচ্ছে, মহা ধুমধাম করেই পালন হচ্ছিল। সাথে সবাই মিলে ‘বাংলার মাটি বাংলার জল…’ গানটি রাস্তায় গাইছিল।

এই ঘটনাটি ১৯০৫ সালে ঘটেছিল। সেই সময়ের কথা। এই গানটি সে সময়েতেই তৈরি হয়েছিল। যখন বাংলা ভাগ করার জন্যে উঠে পরে লেগেছিল ইংরেজ সরকার। সে সময়ে বঙ্গভঙ্গ রুখতে রাখিবন্ধন উৎসবের ডাক দিয়েছিলেন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আর সেই ঘটনা ঘিরেই এ গানটি লেখেন তিনি এবং রাখি বন্ধন উৎসব পালন করে।

গবেষক সমীর সেনগুপ্ত জানিয়েছেন “রাখীবন্ধনের প্রস্তাব গৃহীত হয় সম্ভবত ২৭ সেপ্টেম্বর ১৯০৫ তারিখে অক্রূর দত্ত লেনে ‘সাবিত্রী লাইব্রেরি স্বধর্মসাধন সমিতি’র সভায়; রবীন্দ্রনাথ সভাপতিত্ব করেন, এবং এই প্রস্তাব উপলক্ষে গানটি রচনা করেন– গানটি ‘রাখীসংগীত’ নামেই প্রথম মুদ্রিত হয়।”

বঙ্গভঙ্গ আন্দলোনের পালটা প্রতিবাদ হিসেবেই এই গান তৈরি হয়েছিল। বাংলা ও বাঙালির মনের সেই আগুন জাগাতেই কবি রবিন্দ্রনাথ এই গানের জন্ম দেয়। বঙ্গভঙ্গ প্রতিরোধ করার আন্দোলনের সূত্রে যেই গানের জন্ম, বাংলার রাজ্য সংগীত নির্বাচনের ক্ষেত্রে সেই গানের প্রসঙ্গ উঠবে সেটা খুবই স্বাভাবিক আর তেমনটাই ঘটেছে। কিন্তু সেই গানে ভাষা বদলানোয় কতটা এই সিদ্ধান্তে সবাই রাজি হবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...