নতুন বছর শীতের আমেজ গায়ে মেখে চলছে বনভোজন আর পিকনিক পর্ব। একঘেঁয়ে রুটিন থেকে বেরিয়ে একটু অন্যরকমের স্বাদ। মিলেমিশে রান্না-বান্না আর পাত পেড়ে খাওয়া, ব্যাট-বলে হইচই-বছরের এই সময়টার জন্য তাকিয়ে থাকা সারা বছর। ভক্তদের যখন এইরকম অবস্থা তখন বনভোজন সেরে এলেন প্রভু জগন্নাথ দেবও। মোটেই তিনি একা নন, সঙ্গে আছেন দাদা বলরাম আর সহদোরা সুভদ্রাও। সঙ্গে থাকেন শ্রীকৃষ্ণ, গোপালজীও।
বীরভূমের দুবরাজপুর ব্লকের হেতমপুরে শ্রীগৌরাঙ্গ মন্দিরে প্রতিবছর নববর্ষের প্রথম দিনটিতে শ্রী জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রা মেতে ওঠেন বনভোজনে। মন্দির থেকে বনভোজন যাত্রা করেন তাঁরা। তাঁদের সঙ্গী হন ভক্তরাও। এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন মহারাজ শ্রী রামরঞ্জন বেরা। মন্দিরের দায়িত্বে রয়েছ গৌড়ীয় মঠ। প্রাচীনকালে এই মন্দির প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই বনভোজনের এই রীতি প্রচলিত রয়েছে। এই দিনেই ২০০৭ সালে হেতমপুরের মহারাজা মাধবী রঞ্জন চক্রবর্তী গৌড়ীয় মঠের হাতে মন্দিরের ও দেবতাদের সেবার দায়িত্ব তুলে দেন। সেই কারণেও দিনটি হয়ে ওঠে বিশেষ। মন্দিরের পাশেই রয়েছে মহুল জঙ্গল। বনভোজনের দিন নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে যাওয়া হয় বিগ্রহ। সেখানে ভোগ দেওয়া হয় দেবতাকে। খিচুড়ি, পায়েস, মিষ্টি ছাড়াও আরও প্রায় পঞ্চাশ থেকে ষাট রকম পদ থাকে ভোজনে। সারা দিন নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠান চলে। দিন শেষে মূল মন্দিরে নিজ-আসনে ফিরে আসেন শ্রী জগন্নাথ ও তাঁর সঙ্গী দেবতারা।
তবে কোনওবছর যদি ১ জানুয়ারি একাদশী তিথিতে পড়ে তাহলে তার পরের দিন অনুষ্ঠিত হয় বনভোজন।
হেতমপুর গৌরাঙ্গ মন্দির কৃষ্ণপ্রেমে মানুষের কাছে অত্যন্ত বিশেষ। একই সঙ্গে জগন্নাথ মাহাত্ম্যের জন্যও বিখ্যাত। রথযাত্রা এবং স্নানযাত্রা দুই উৎসব পালিত হয় জাঁকজমক করে। ব্রিটিশ আমলের পিতলের রথ আসে হেতমপুর রাজবাড়ি থেকে।