বাঁশের চাল

চাল। কিন্তু খেতে ঠিক ভাতের মত নয়। রুটির মত। আটা-আটা।

জন্মের উৎসও ধান নয়, বাঁশ। ব্যাম্বু রাইস।

আম বাজারে চেনা-জানা বাঁশকাঠি চালের সঙ্গে কিন্তু ব্যাম্বু রাইসের বিন্দুমাত্র মিল নেই।

ব্যাম্বু রাইস কে বলা যায় ট্রেজার। ১০০ বছরে মাত্র বার তিনেক জন্মায়।

ওড়িশার মাটিতে শেষ দেখা গিয়েছিল ১৯৭৯ তে। প্রায় চল্লিশ বছর আগে।

হাই ক্যালরির ব্যাম্বু রাইস অবশ্য কর্ণাটকের কিছু জায়গাতেও পাওয়া যায়। সেখানে নামটা আলাদা। স্থানীয় মানুষ ব্যাম্বু রাইস কে ডাকে মুলায়িরিনামে। কেরালার কন্যাকুমারী ফরেস্টে কানহি প্রজাতির মানুষ বাঁশ গাছে চাল ফলাত।

bamborice

ব্যাম্বু রাইস কী?

শুকনো বাঁশের ভিতর হয়। হঠাৎ দেখলে  মনে হবে বাঁশের ভিতর থেকে এক ঝাঁক লতানে ধান গাছ। আসলে বাঁশ ফুলের বীজ। ভীষণ অনিশ্চিত ফলন। চাষ করাও কঠিন। ছোট দানার ধানের মত দেখতে।  খোসা হাল্কা সবুজ দানার মত দেখায়।

গ্রামীণ উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষ ব্যাম্বু রাইস চাষ করে অর্থকরী প্রয়োজনে। দক্ষিণ ভারতের সঙ্গে উত্তর ভারতের কিছু অংশেও এর প্রচলন আছে। দক্ষিণে পোঙ্গল উৎসবে ব্যাম্বু রাইস দিয়ে ক্ষীর তৈরি হয়। প্রাচীন প্রথা। এই চালের  জনপ্রিয়তা অনেক বেশি বিদেশে।

উপকারি?

আর পাঁচ রকম চালের ভাতের মতই এই চাল। কিন্তু ফ্যাট লেভেল এতটাই লোযে বলা চলে নো-ফ্যাট। কলেস্তেরল কম। ব্যাম্বু রাইস তাই ডায়াবেটিক রুগিদের জন্য বিপদমুক্ত। জয়েন্টের ব্যাথা, ব্যাক পেন, নেক পেন এর ওষুধ। আয়ুর্বেদে ব্যবহার আছে।   

কটকের ছন্দাকা-দাম্পারা ওয়াইলদ লাইফ স্যানিচুয়ারি খুলে দেওয়া হয় ব্যাম্বু রাইস সংগ্রাহকদের জন্য। ইঁদুরের আতংক। রাজ্যে বিপুল শস্যহানির ভয়।   

ইঁদুরের ত্রাস

বাঁশ গাছে ফুল ধরলে তা থেকে চাল মেলে। কিন্তু তবু  বাঁশ গাছে ফুল দেখলে গ্রামের মানুষের বুকে কাঁপন ধরে। ভয়ে। ভয় অনাহারের। ভয় অনটনের।

বাঁশের ফুল প্রোটিনের ভান্ডার। তার টানেই ধেয়ে আসে ধাড়ি ইদুর আর গেছো ইন্দুররে দঙ্গল। ফুল তো খায়ই। তার সঙ্গে চাষির ক্ষেত, আর গৃহস্থের ঘর-ও। শোনা যায়, শেষবার ১৯৫৯ বাঁশ গাছে ফুল হয়েছিল। তারপরই দুর্ভিক্ষ। বহু প্রাচীন প্রবাদেও বাঁশগাছের ফুল কে দুর্ভিক্ষের সঙ্কেত হিসাবে মানা হত।

ভাতের সঙ্গে তফাত কী?

সাধারন ভাবে ভাতের স্বাদ যেমন, ব্যাম্বু রাইসের স্বাদ তার থেকে বেশ আলাদা। অনেকটা আটার মত, সঙ্গে হাল্কা মিষ্টি। রান্নার পর আঠালো হয়ে পাত্রের গায়ে জমে যায়। নরম হতে সময় নেয় বেশি।

bamboo-rice

বাজারে বেশ মহার্ঘ্য। ৫০০-৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। তাও খুব কম  জায়গাতেই সন্ধান মেলে।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...