আদি শঙ্করাচার্য বদ্রীনাথ মূর্তি অলকানন্দা থেকে উদ্ধার প্রতিষ্ঠা করেন মন্দির

দীর্ঘ অপেক্ষার পর ২৭ এপ্রিল খুলে গিয়েছে বদ্রীনাথ ধামের দরজা। চারধামের অন্যতম এই মন্দিরে পূজিত হন ভগবান বিষ্ণু। বিশেষ বৈদিক পূজা অর্চনার পর সাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয় মন্দির। মন্দির খোলা থাকবে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত। শীত শুরু হলে বন্ধ হয়ে যায় মন্দির।

 উত্তরাখণ্ডের অলকানন্দা নদীর তীরে চামোলি জেলার গাড়ওয়াল পাহাড়ে অবস্থিত বদ্রীনাথ মন্দির। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১০, ২০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। জোশীমঠ থেকে মন্দিরের দূরত্ব প্রায় ৪৫ কিমি।

মন্দিরের গর্ভগৃহে রয়েছে ভগবান বদ্রীর এক মিটার লম্বা শালগ্রাম মূর্তি। মন্দির ঘিরে প্রচলিত আছে বহু লোককথা শোনা যায়। ভাগবত্‍ পুরাণ, স্কন্দ পুরাণ এবং মহাভারতে উল্লেখ রয়েছে বদ্রীনাথ মন্দিরের। মন্দির তিনটি পৃথক অংশে বিভক্ত।  গর্ভগৃহ, দর্শন মণ্ডপ ও সভা মন্ডপ। ব্রহ্মাকপাল নামেও মন্দিরটি পরিচিত।  বৈষ্ণবদের কাছে এই মন্দির 'দিব্য দেশম' নামে পরিচিত। তবে বদ্রীনাথ মন্দিরের স্থাপত্যের সাথে মিল রয়েছে বৌদ্ধ স্থাপত্যের। কথায় আছে প্রথমে এটি একটি বৌদ্ধ মন্দির ছিল।

আদি শঙ্করাচার্য বদ্রীনাথের মূর্তিটি অলকানন্দা নদী থেকে উদ্ধার করে তপ্তকুন্ড উষ্ণ প্রস্রবণের কাছে মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি প্রায় ছয় বছর এখানেই বসবাস করেছিলেন। হিন্দুদের প্রাচীন গ্ৰন্থ ভাগবত পুরাণ, স্কন্দ পুরাণ ও মহাভারতে এই মন্দিরের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। মহাভারতের বলা হয়েছে, যে কোনও তীর্থে পুণ্য লাভ করতে হলে ধর্মানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কিন্তু বদ্রীনাথের কাছে এলেই পুণ্য লাভ করেন ভক্তরা।

বিষ্ণুপুরাণ গ্ৰন্থে বদ্রীনাথের উৎপত্তি নিয়ে একটি গল্পের উল্লেখ রয়েছে। এই গল্প অনুযায়ী, ধর্ম নামক এক ব্যক্তির দুই পুত্র ছিল যাদের নাম ছিল- নর ও নারায়ণ। তাঁরা ধর্ম প্রচারের জন্য এই স্থানটিকে বেছে নিয়ে ছিলেন। তখন এই অঞ্চলে আশ্রম স্থান করতে গিয়ে তাঁরা চার বদ্রী সহ একটি উষ্ণ ও শীতল প্রস্রবণের সন্ধান পান তাঁরাই এই স্থানটির বদ্রীবিশাল। কেদারনাথ মন্দিরে যেমন পূজিত হন মহাদেব। সেরকমই বদ্রীনাথে পূজিত হন বিষ্ণু। এই মন্দিরে ভগবান বিষ্ণু বদ্রীনাথ নামেই পরিচিত। মন্দিরের বিষ্ণু মূর্তিটি কষ্টিপাথর দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল।

পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী মানুষের বিশ্বাস, ত্রেতাযুগেই একমাত্র এই মন্দিরের আসল রূপ দেখা গিয়েছিল। একসময় এই অঞ্চলে বদ্রী গাছের আধিক্য ছিল। তখন এই ভূমি ছিল তপোভূমি। বিষ্ণুদেব ধ্যানমগ্ন ছিলেন এখানে। স্ত্রী লক্ষ্মী তাঁকে ছায়া দেওয়ার জন্য গাছ জন্ম নেন। তখন বিষ্ণুদেব এই ভূমির নামদেন ‘বদ্রীনাথ’। 

তবে বদ্রীনাথের মন্দির বহুবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৮০৩ সালে হিমালয়ের ভূমিকম্পে মন্দিরটির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। তারপর জয়পুরের রাজা মন্দিরটি পূর্ণ নির্মাণ করেন. এরপর উত্তরাখণ্ডের সরকার মন্দির সংলগ্ন এলাকায় কোনও রকম নির্মাণের কাজ চালানোর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।

ঋষিকেশ থেকে এই মন্দিরের দূরত্ব প্রায় ৩০০ কিলোমিটার। তবে এই পথে দেবপ্রয়াগ,রুদ্রপ্রয়াগ, কর্ণপ্রয়াগ, উক্তিনাথ ও গোপেশ্বরর মতো তীর্থস্থান গুলি। ভক্তরা প্রত্যেক বছর এই পথ ধরেই ভগবান বদ্রীনাথের দর্শন করতে যান।  এই মন্দিরে শঙ্খ বাজানো হয় না।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...