কালি বৃত্তান্ত

সম্প্রতি গণতন্ত্রের প্রধান উৎসব মানে ভোট শুরু হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ ও আসামের বিধানসভা নির্বাচন দিয়ে। যদিও এ প্রথম এমন নয়, এর আগেও হয়েছে। কিন্তু এই উৎসবের সেন্টার অফ এট্রাকশন হলো আঙুলের অদ্ভুত রঙা এক কালির চিহ্ন। মজা করে বলা যায়, নতুন ভোটারদের সেলফির অনুপান, কিন্তু সত্যি বলতে এই কালির উপর টিকে থাকে সরকার - এমন ক্ষমতা তার। আর সেই কালির দাগ তোলা নিয়ে শুরু হয় এক মহাযজ্ঞ। জানেন কি তামাম এশিয়ার এই কালি বানানো শুরু হয় প্রথম ভারতে? আজ সেই কালি বৃত্তান্তই  বলবো।

ink1

এবার আসি এই কালির ইতিহাস সম্পর্কে। শুরুতে কিন্তু এমন কালি ব্যবহার করা হয়নি অন্তত স্বাধীন ভারতের প্রথম ২টি নির্বাচনে। কিন্তু দুর্নীতি হতে কতক্ষণ? তাই তার প্রতিরোধক হিসেবে তৃতীয় সাধারণ নির্বাচনের আগে কমিশন সিদ্ধান্ত নেয় যে,  ভোট দেওয়ার প্রমান স্বরূপ এমন এক চিহ্ন ব্যবহার প্রয়োজন যাতে এক ব্যক্তি দুবার ভোট দিতে না পারেন। অন্তত মাসখানেক আগে সেই রং যেন না ওঠে।

ink2
                           
সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসে মাইসোর পেইন্টস অ্যান্ড বার্নিশ লিমিটেড। তারা এমন এক কালির কথা জানান যা ধুলেও থেকে যাবে দাগ। আর তা সম্ভব সিলভার নাইট্রেট এর সাহায্যে। এই সিলভার নাইট্রেট চামড়ার লবণের সঙ্গে বিক্রিয়া করে রং বদলে বেগুনি হয়ে যাবে।আর সেই রং মোছা যাবে না। কিছুদিন পর নতুন চামড়ার সঙ্গে রং হারিয়ে যাবে। কার্যত একটু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে এই কালি কিন্তু আজও  ব্যবহার করা হয়, ক্রমাগত এই রং বেগুনি হতে থাকে।

ink3
                          
যাইহোক, প্রথম ১৯৬২ সালে নির্বাচনে ব্যবহার করা হল এই ভোটের কালি।যদিও মাইসোর পেইন্টসের বয়স নেহাত কম না। ১৯৩৭ সালে মহীশুরের রাজা  কৃষ্ণরাজ ওয়েদারের হাত ধরে জন্ম হয় এই কারখানার। তবে তৃতীয় সাধারণ নির্বাচনের আগেই ভারত সরকার মাইসোর পেইন্টস অধিগ্রহণ করে। এই সংস্থার প্রধান কাজ শুধুই ভোটের কালি তৈরি করা। আর শুধুই ভারতে নয়, গোটা এশিয়াতেই এই একটি কারখানাতে তৈরি হয় ভোটের কালি। আর এখান থেকেই  আজও পৌঁছে যায় বিভিন্ন দেশে। আর বলতে দ্বিধা নেই গণতন্ত্র রক্ষায় মাইসোর পেইন্টসের এই অনবদ্য ভূমিকা সত্যি কুর্নিশের দাবি রাখে।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...