ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের মিউজিয়ামগুলি পড়ুয়াদের চাপে পড়ে বিদেশি পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন ফেরাচ্ছে

এক সময় প্রায় গোটা বিশ্বে উপনিবেশ গড়ে তুলেছিল ইংরেজরা। সেই কারণে বিভিন্ন জায়গার বিভিন্ন নিদেশন আকর্ষণ করেছিল তাদের স্বাভাবিকভাবেই। সেগুলি মধ্যে থেকে পছন্দের জিনিসগুলি নিয়ে নিজেদের দেশের মিউজিয়াম সমৃদ্ধ করেছিল তারা। এর ফলে ব্রিটেনের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে বিভিন্ন দেশের পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন শোভা পেয়েছে এতদিন ধরে। কিন্তু আর নয়। ধীরে ধীরে সেগুলিকে স্বদেশে ফেরানোর জন্য উদ্যোগী হয়েছে ব্রিটেন।

                 এই কাজ মূলত সম্ভব হয়েছে পড়ুয়াদের সৌজন্যে। তারা বিভিন্ন দেশ থেকে নিদর্শন নিয়ে আসাকে অন্যায়ের চোখেই দেখছে। ছাত্রছাত্রীদের চাপের মুখে শেষপর্যন্ত নিদর্শনগুলি সিংশ্লিষ্ট দেশে ফেরানোর আবেদনে সাড়া দিয়েছে ব্রিটেনের বিশ্ববিদ্যালয়ের জাদুঘরগুলি। তবে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট এই সংক্রান্ত সমস্ত দাবি মানতে রাজি নয়। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, আজকের দাবিদাররা কী আদৌ বিগতদিনের ওই নির্যাতিতদের উত্তরাধিকারী? এছাড়া বিশেষজ্ঞ মহল বলছে, এভাবে আত্মসমর্পণ ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদে জোর দেওয়া সহ আরও বেশ কিছু কঠিন প্রশ্ন তুলে দেবে। ঔপনিবেশিক আমলে লুঠ করা হয়েছে, এমন যে সমস্ত নিদর্শন রয়েছে, সেগুলি ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে মিউজিয়াম ও গ্যালারিগুলিকে পরামর্শ দেওয়ার জন্য ইতিমধ্যেই একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে আর্টস কাউন্সিল ইংল্যান্ড। ব্রিটিশ মিউজিয়াম এবং ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড অ্যালবার্ট (যেখানে মহারাজা রণজিৎ সিংয়ের সিংহাসন রয়েছে), টাওয়ার অফ লন্ডন মিউজিয়াম (যেখানে কোহিনুর রয়েছে) থেকেও বিভিন্ন নিদর্শন ফেরানোর দাবি উঠেছে। কিন্তু পার্লামেন্টের আইন অনুযায়ী তা নিষিদ্ধ হলেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলি সেই আইনের আওতায় পড়েনা।

               তথ্যের স্বাধীনতা আইনে প্রাপ্ত নথি অনুযায়ী গত পাঁচ বছরে অন্তত ৮৫ শতাংশ অনুরোধ গ্রহণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি২০০৯ সাল থেকে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলিকে সাতটি অনুরোধ করা হয়েছিল, তার মধ্যে ৮টি অনুরোধই রাখা হয়েছে। এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় গত বছর ৯টি ভেদ্দা করোটি শ্রীলঙ্কায় ফিরিয়ে দিয়েছে এবং মাওরি উপজাতির কঙ্কালগুলি নিউজিল্যান্ডে ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে। গত বছর ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ও অস্ট্রেলিয়ার আদিম জনগোষ্ঠীগুলিকে ৪৩টি নিদর্শন ফিরিয়ে দিয়েছে। ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয় ২০১১ সালে অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে জন হারউড নামে একজন স্থানীয় বাসিন্দার দেহাবশেষ ফিরিয়ে দিয়েছে। শুধুমাত্র কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৭ সালে ট্রিনিটি কলেজে রাখা একটি আদিম বল্লভ ফেরানোর আর্জি খারিজ করে দিয়েছে। ঐতিহাসিকভাবে দেখতে গেলে রি পদ্ধতি অনেকটাই ধীর গতির, কিন্তু মিউজিয়ামের তত্ত্বাবধায়ক এবং শিক্ষাবিদরা এখন এই নিয়ে অনেক বেশি সক্রিয়।

                       

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...