রহমানের জীবনের প্রথম রোজগার ৫০ টাকা!

চেয়েছিলেন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হতে, কিন্তু তাঁর নিয়তি ছিল সুর। সেই পথেই হলেন পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ সুরকার। এ. আর রহমান।

গোটা দুনিয়া তাঁকে এই নামে চিনলেও রহমানের প্রথম নাম কিন্তু ছিল অন্য। আসল নাম দিলীপ কুমার। তিনি নিজেও ভাবেননি কখনও গানের জগতের মহাতারকা হবেন। সেই মতোই ইঞ্জিনিয়ারিং-এর পাঠ নিয়েছিলেন।

একবার দূরদর্শনের ধারাবাহিকে অভিনয়ও করেছিলেন। সেই ধারাবাহিকের নাম ছিল ‘ওয়ান্ডার বেলুন’। চারখানা কি-বোর্ড একসঙ্গে বাজিয়ে চমকে দিয়েছিলেন সবাইকে।

ছোটবেলায় বন্ধুদের ব্যান্ডেও কিবোর্ড বাজাতেন তিনি। ব্যন্ডের সদস্য ছিলেন শিভমণি, জন অ্যান্টনি, সুরেশ পিটার্স, রাজা আর জোজো। ব্যান্ডের নাম ছিল ‘নেমেসিস অ্যাভিনিউ’। সেই কিবোর্ড আজও রাখা আছে তাঁর চেন্নাইয়ের স্টুডিয়োতে। 

এয়ারটেলের টিউন আগে ফোনে ফোনে ঘুরত। ভীষণ জনপ্রিয় হয়েছিল সেই সুর। জানলে ওবাক হবেন সেই সুরের নেপথ্যের মানুষটির নাম এ আর রহমান।   

রহমানের বাবা আরকে শেখর ছিলেন গানের জগতের মানুষ। তামিল আর মালায়ালাম ছবিতে সুর দিতেন। বাড়ির দেওয়ালে লতা মঙ্গেশকরের একটা ছবি, প্রতিদিন সুর তৈরির কাজ শেষ হলে তাঁর বাবা সেই ছবির দিকে একবার তাকাতেন। লতা তাঁর বাবার কাছে ছিলেন সুরের দেবী। 

রহমান মণিরত্নমের আবিষ্কার। তাঁর তামিল ছবি ‘রোজা’ ছবিতে প্রথম মিউজিক কম্পোজ করেছিলেন তরুণ রহমান। পারিশ্রমিক পান ২৫ হাজার টাকা। সঙ্গে জাতীয় পুরস্কার।  

জীবনের প্রথম রোজগার ৫০ টাকা। একটা রেকর্ড প্লেয়ার অপারেট করে পেয়েছিলেন। কিন্তু টাকার অঙ্ক নিয়ে মাথা ঘামাননি কোনদিন। তাঁর কাছে জরুরি শব্দ প্যাশন।

রাত জাগেন সুরের জন্য। রাতের বুক থেকে নির্জনে তুলে আনেন সুরের মায়া। কিন্তু শুধু ‘একা’কে নিয়ে রহমান বাঁচেন না। তিনি বিশ্বাস করে যৌথতে। শিল্পীর নিবিড় সাধনার মধ্যেও রহমান তাই আদর্শ সুরের গুরু। কতজনের যে জীবন বদলেছেন ইয়ত্তা নেই। তেমনি এক নাম বিশাল চন্দ্রশেখর। সম্প্রতি ‘সীতা রমম’  আর ‘জিল জাং জ্যাক’ ছবির অনবদ্য কম্পোজিশনে নজর কেড়েছেন গান প্রেমিদের। তাঁর সুরের গুরু রহমান। রহমানের মিউজিক স্কুলের ২০০৮-এর ছাত্র তিনি। 

রহমান প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বিশাল বলেন, একজন গানের ছাত্রের যা যা জরুরি সেই সব দেন রহমান। সুর আর সুর তৈরি দুই ক্ষেত্রেই। একবার নিজের রিসার্চ পেপার রহমানকে ইমেলে পাঠিয়েছিলেন তিনি। ঘড়ির কাঁটা প্রায় ১২ ছুঁবে তখন, তবু পাঁচ মিনিটের মধ্যে উত্তর এসেছিল ‘ইটস গুড’। বিশালের পরিচয় তখন ‘প্রাক্তন ছাত্র’। তবু উত্তর দিতে দেরী নেই। এই বোধই রহমানের জীবন জুড়ে। সেখান থেকেই তিনি পান সমাজকে কিছু ফিরিয়ে দেওয়ার দায়। ছাত্র তৈরীতেও তিনি তাই ক্লান্তিহীন।২০১৩ সালে কানাডাতে একটা রাস্তার নামকরণ করা হয় এ. আর রহমানের নামে। রাস্তার নাম আল্লাহ রাখা স্ট্রিট।

শোরগোল, হইহুল্লোড় করে নিজের জন্মদিন পালন করতে পছন্দ করেননি কোনওদিন। বিশেষ দিনটি শুরু হয় প্রার্থনা দিয়ে। খুব নিভৃতে। দুঃস্থ, অনাথ মানুষদের সঙ্গে কাটান। নিজের জন্মদিনে পেয়েছিলেন প্রথম পিতৃত্বের স্বাদ। ছেলে আমেন’র জন্ম হয়েছিল একই দিনে। ৬ জানুয়ারি।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...