পরিচালক মৃণালের ছবিতেই জন্ম হয়েছিল অভিনেতা অঞ্জনের

সময়টা আশির দশক। তখন তিনি বাউন্ডুলে একুশ। তর্ক করতে ওস্তাদ। বেজায় ডেঁপো লম্বা চুলের এক তরুণের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়েছিল কলকাতার মধ্য পঞ্চাশের এক বিশ্ব বিখ্যাত পরিচালকের।

একুশের যুবক অঞ্জন দত্ত আর সেই বিখ্যাত পরিচালকের নাম মৃণাল সেন। অভিনেতা অঞ্জন তাঁরই আবিষ্কার।

তিনি থিয়েটার করতেন।  মৃণাল সেনের ‘চালচিত্র’ ছবি দিয়ে ডেবিউ করেন।

তাঁর প্রথম ছবির গল্প বেশ অন্যরকম। তাঁর নিজের কথায়  শুরুতেই তাঁর নায়ক হওয়ার সমস্ত ইচ্ছে জলাঞ্জলি দিয়ে দিয়েছিলেন শিক্ষক মৃণাল। সাধের লম্বা চুলে দিলেন কাঁচি চালিয়ে। তারপর স্যান্ডো গেঞ্জি পরিইয়ে তেল মাখিয়ে মাঠে দৌড় দৌড়! পরিচালক মশাইইয়ের কথা এদিকে কানে আসছে না। তিনি বললেন ‘যা মনে হয় তাই করো’। তাঁর চাই ন্যাচারাল রিঅ্যাকশন।

ছবির নাম ‘চালচিত্র’। এই ছবিতে অভিনয়ের জন্য তিনি ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সেরা নবাগত অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছিলেন।  পরবর্তী সমইয়ে খারিজ, অন্তরীণ, মহাপৃথিবী ছবিতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। মৃণাল সেন ছিলেন তাঁর পিতৃতুল্য। আবার অবাধ বন্ধুত্বের আরাম। সেখান যুক্তি, তর্ক রাজনীতি , দর্শন সব কিছু ছিল। মৃণালের চোখ দিয়ে কলকাতা চিনেছিলেন অঞ্জন।

মৃণালের ছবি ‘মহাপৃথিবী’র গল্প অঞ্জনের লেখা। ‘দেওয়াল’ বলে একটা নাটক করতেন। সেই গল্পকে কিছুটা ভেঙেচুরেই তৈরি হয় ‘মহাপৃথিবী’। বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হয়েছিল সেই ছবি।

অভিনেতা অঞ্জনের সিনেমায় জন্ম হয়েছিল এভাবেই।  দামাল অঞ্জন মানেই বাঙালির কাছে পাগলকরা পাহাড়ি হাওয়া। সে হাওয়ায় ক্ষ্যাপামি আছে দুরন্ত, আর আছে ভেসে যাওয়ার টান। সেই টানেই ভেসে গিয়েছিল নব্বই দশকের কলকাতা। জিনস, গিটার আর কালো সানগ্লাস।

আশির দশকের সেই প্রথম শুরুর কাহিনি নিয়েই ২০২৩-এ অঞ্জন গড়েছেন ‘চালচিত্র এখন’। এই ছবিটির সম্পূর্ণ প্রযোজনা করেছেন পরিচালক স্বয়ং এবং তাঁর পুত্র নীল দত্ত। মৃণাল সেনকে ছবিতে ফিরিয়ে এনেছেন তিনি। ২০২৩-এর কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে তুমুল প্রশংসা পেয়েছে তাঁর সেই প্রয়াস। জন্মসূত্রে দার্জিলিং-এর অঞ্জন এখন কলকাতার। মৃণালের সার্থক উত্তরসূরি।

 

 

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...