তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েই নাকি ধরাধামে আসেন বিষ্ণুর ‘চৈতন্যরূপে’ আবির্ভাব

অদ্বৈতের কারণে চৈতন্য অবতার।
সেই কথা প্রভু কহিয়াছেন বার বার।।

ভক্তমুখে তিনি মহাদেবের অবতার। তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েই নাকি ধরাধামে আসেন স্বয়ং বিষ্ণুর ‘চৈতন্যরূপে’ আবির্ভাব।

শ্রীপাট শান্তিপুর মানেই বৈষ্ণব বিশ্বের কাছে অদ্বৈতাচার্য। এই জনপদ তাঁর সাধনক্ষেত্র। অদ্বৈতাচার্যকে নিয়ে বৈষ্ণব সমাজে অসংখ্য কাহিনি আর গল্প প্রচলিত।  

তাঁর জন্ম বাংলাদেশের শ্রীহট্টের লাউর পরগনায়। পূর্বাশ্রমে নাম ছিল কমলাক্ষ মিশ্র। সময়টা ৮৪০ বঙ্গাব্দের মাঘী সপ্তমী তিথি। পিতা কুবের মিশ্র ছিলেন নবগ্রামের রাজা দিব্যসিংহের সভাপণ্ডিত।

4305ca95-fca3-4af7-943c-7c193e1a9498

জন্মের পর তার অনেকটা সময় সিলেটেই কাটে। বারো বছর বয়সে কমলাক্ষ চলে আসেন শান্তিপুরে।  সুদীর্ঘ জীবনের বড় অংশই কেটেছে শান্তিপুরে। নবদ্বীপ তখন ছিল প্রাচ্যের বারাণসী, জ্ঞানবিজ্ঞানের সাধনক্ষেত্র। এখানে টোল খুলেছিলেন শান্তিপুরের অদ্বৈত আচার্য। তিনি ছিলেন সংসারে থেকেও সন্ন্যাসী। দুই সহধর্মিনী ছিল তাঁর। নাম শ্রীদেবী ও সীতাদেবী। বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী তার দশমতম বংশধর।

বৈষ্ণব দীক্ষার জগতে তার গুরু ছিলেন মাধবেন্দ্র পুরী। দীক্ষা লাভের পর তিনি অদ্বৈতাচার্য উপাধি লাভ করেন। শ্রী চৈতন্যের আবির্ভাবের পূর্বেই অদ্বৈতাচার্য প্রসিদ্ধি লাভ করেছিলেন।

নিমাইয়ের শিক্ষাগুরু ছিলেন। কিন্তু তাঁর জন্মের আগে থেকেই জগন্নাথ মিশ্রর পরিবারের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগ ছিল। জনশ্রুতি, এখানেই শচীমাতা পরম পূজ্যপাদ অদ্বৈত প্রভুর আশীর্বাদপূত তুলসী মঞ্জরী সেবনে শ্রীগৌরাঙ্গকে গর্ভে ধারণ করেছিলেন। চৈতন্যদেবের যখন জন্ম হয় তখন অদ্বৈতাচার্যের ৫২ বছর।

পরবর্তী সময়ে চৈতন্য পথের পথিক হন। বৈষ্ণব মতবাদের প্রচারে অদ্বৈতাচার্য নিত্যানন্দের সঙ্গী হিসেবে এই মতবাদ প্রচারে আত্মমগ্ন হন। আনুষ্ঠানিকভাবে তিনিই প্রথমবারের মত নিমাইকে স্বয়ং ভগবান মানেন। পুরীতে এক রথযাত্রার অনুষ্ঠানে তিনি চৈতন্যদেব যে একজন অবতার তা ঘোষণা করেন।

১৫১৩ খ্রিস্টাব্দে শ্রী চৈতন্য শান্তিপুরে এলে তিনি বিদ্যাপতির পদ গেয়ে তাকে স্বাগত জানান। তাঁর সাধনপীঠেই গৌরাঙ্গ, নিত্যানন্দ ও অদ্বৈতাচার্যের মিলন ঘটেছিল। সন্ন্যাস গ্রহণের পর এখানেই নিমাইয়ের সঙ্গে দেখা হয়েছিল শচীমাতার। এই সাধনপীঠে দশ দিন বসবাস করে সন্ন্যাসীপুত্রের সেবা করেছিলেন তিনি।

অদ্বৈতাচার্য ১২৫ বছর বেঁচেছিলেন। তাঁর ছয় পুত্র। অচ্যুতানন্দ, কৃষ্ণ, গোপাল, স্বরূপ, জগদীশ এবং বলরাম মিশ্র। বলরাম মিশ্রের দশ পুত্র। তাঁর মধ্যে ষষ্ঠ হলেন মথুরেশ। এই মথুরেশ ছিলেন প্রখ্যাত নৈয়ায়িক। তাঁর হাত ধরে শান্তিপুরে শাস্ত্রচর্চা নতুন ভাবে প্রাণ ফিরে পেয়েছিল। ন্যায়ের পণ্ডিত মথুরেশ ছিলেন অত্যন্ত দূরদৃষ্টি সম্পন্ন। তাঁর তিন পুত্র। রাঘবেন্দ্র, ঘনশ্যাম এবং রামেশ্বর। অদ্বৈতাচার্যের জীবিত কালেই নিজ পুত্রদের পৃথক করে দিয়ে ছিলেন মথুরেশ। শান্তিপুরের বিভিন্ন এলাকায় তাদের বসবাসের ব্যবস্থা হয়। বড়পুত্র রাঘবেন্দ্র থেকেই বড় গোস্বামী শাখার সৃষ্টি। শান্তিপুরে অদ্বৈতাচার্য নেপাল থেকে গণ্ডকী নদীর থেকে নারায়ণ শিলা প্রাপ্ত হন যা আজও বড়ো গোস্বামী বাড়িতে নিত্য পূজিত হয় আসছেন। মদনগোপাল নামক চিত্রপট প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।  

অদ্বৈতাচার্যের সাধনক্ষেত্র অদ্বৈতপীঠ লোকমুখে শ্রী অদ্বৈত পাট। শান্তিপুরের শহরতলি বাবলা বৈষ্ণবতীর্থ শান্তিপুরের আসল আকর্ষণ। অদ্বৈতাচার্য সম্বন্ধে একটি সংস্কৃত ভাষায় এবং চারটি বাংলায় আলোচনা পাওয়া যায়। সেগুলি যথাক্রমে বাল্যলীলাসূত্র, অদ্বৈতমঙ্গল, অদ্বৈতপ্রকাশ, অদ্বৈতমঙ্গল, অদ্বৈতবিলাস।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...