আদিত্য এল-১ এবার প্রস্তুত সৌরযানের উদ্দেশ্যে, কি কাজ করবে জানাল ইসরো

২৩ আগস্ট বুধবার সন্ধে ৬টা ৪ মিনিটে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সফল অবতরণ করে ল্যান্ডার বিক্রম। চাঁদের দক্ষিণ মেরুর মাটিতে পা রেখে ইতিহাস রচনা করেছে ভারত। এবার তাদের লক্ষ্য সুর্য অভিযানে।

শনিবার, ২ সেপ্টেম্বর মহাকাশে সূর্য অভিযানের জন্যে রওনা দেবে ইসরোর আদিত্য এল-১। প্রস্তুতি এখন একেবারে শেষের দিকে। শনিবার সকাল ১১টা বেজে ৫০ মিনিটে অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটা স্পেস সেন্টার থেকে রওনা দেবে ভারতের সৌরযান আদিত্য এল-১।

এটি হচ্ছে ভারতের প্রথম সৌরযান। এই অভিযান সফল হলে নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকে সূর্যকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে পর্যবেক্ষণ করবে বিজ্ঞানীরা। ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্টে থেকে ভারতের সৌরযান নজরদারি চালাবে।

তবে, এই ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্ট আসলে কী? এই অভিযানের মূল উদ্দেশ্য কী? সব প্রশ্নের প্রসঙ্গে জানা গেল ইসরোর থেকে।

সূর্যের বায়ুমণ্ডলের বাইরের যে আবরণটি আছে সেটির উপরই পর্যবেক্ষন চালানো হবে। ভারতীয় বিজ্ঞানীরা আশাবাদী যে এই অভিযান থেকে সূর্যের অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতে চলে আসবে। সূর্যের বায়ুমণ্ডলে কী ঘটছে, মহাকাশের সার্বিক আবহাওয়ায় তার কী প্রভাব পড়ছে, সবকিছুর ব্যাপারেই এই তথ্য় হাতে পাওয়া সম্ভব। 

যে ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্টে অবস্থান করবে ভারতের সৌরযান, সেটি কী আসলে?

এর উত্তরে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন যে সূর্য এবং পৃথিবীর মতো দুই বস্তুর পারস্পরিক আকর্ষণ এবং বিকর্ষণের ফলে যে স্থিতিশীল অঞ্চল গড়ে ওঠে, তাকেই বলে ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্ট। এই ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্টকে মহাকাশযানের ‘পার্কিং স্পট’ও বলা হয় কারণ সেখানে কম জ্বালানি খরচ করে এবংমহাজাগতিক কাজের  উপর নিশ্চিন্তায় নজরদরি চালানো যায়। 

গণিত বিশারদ জোসেফ লুইস ল্যাগ্রেঞ্জ সূর্যের উপর নজরদারি চালানোর জন্য এই ‘ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্ট L1’-এর আবিষ্কার করেছিলেন। ইসরো জানিয়েছে, ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্ট L1 থেকে কোনও রকম অসুবিধা ছাড়াই সূর্যকে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব।

ইসরো জানিয়েছে, ‘PSLV-C57’ রকেটের সাহায্যে আদিত্য এল-১ সৌরযানের লঞ্চ হবে। ভারতের সৌরযানে মোট সাতটি পেলোড থাকছে। সেই পেলোডের মাধ্যমে সূর্যপৃষ্ঠ, সূর্যের বহিরাবরণ, বায়ুমণ্ডলের মধ্যেকার প্লাজমার আচ্ছাদন, সৌর আলোকমণ্ডল এবং সৌর বায়ুমণ্ডলের উপর নজরদারি চালানো হবে। 

সূর্যের উপর নজরদারি চালানোর জন্যে করোনাগ্রাফ ব্যবহার করবে আদিত্য এল-১ সৌরযান। কি সেই গ্রাফ? কি হয় এর দ্বারা?

ইসরো জানায়, এই করোনাগ্রাফ হল একটি চাকতির মতন যন্ত্র যা সৌরযানের উপর বসানো থাকবে। তাতে সূর্যরশ্মি নিবদ্ধ হয়ে যায় এবং ওই চাকতির মধ্যেই সূর্যের বহিরাবরণ দেখা যায়। সেটা দেখেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো সম্ভব হবে বিজ্ঞানীদের মধ্যে।

তাঁরা এটাও জানায় যে এই করোনাগ্রাফ না থাকলে সৌরযানের সেন্সর কাজ করবে না। এ বছরের প্রথমেই ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ অ্যাস্ট্রোফিজিক্স (IIA) ইসরোর হাতে নিজেদের তৈরি ভিজিবল লাইন এমিসন করোনাগ্রাফ (VELC) তুলে দেয়। সেটিই বসানো হবে আদিত্য এল-১ সৌরযানে।

আদিত্য এল-১ সৌরযানে থাকছে ছ'টি যন্ত্র বা পেলোড । এই ছ’টি যন্ত্রের মধ্যে চারটি দূর থেকে সূর্যকে পর্যবেক্ষণ করার কাজে থাকবে এবং বাকি তিনটি সূর্য থেকে সৌরঝড়ের মাধ্যমে বাইরে ঠিকরে বেরনো অণুবিক পরীক্ষা করে দেখবে যে সৌরজগতের উপর তার কী প্রভাব পড়ছে এবং সেটাই বিজ্ঞানীরা আরও খতিয়ে দেখবে।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...