আচ্ছা, এক বছরে একটি মানুষের কবার জন্মদিন হয়? সাধারণত একটি। মনে হতেই পারে, প্রয়োজনভিত্তিক বয়েসের পরিবর্তনে একাধিক জন্মদিন হতেই পারে- কিন্তু তার সাথে ইতিহাসের কোনো সম্পর্ক থাকে না, আবার একাধিক জন্মের দিন কিন্তু স্বীকৃত নয়। তবে ব্যতিক্রম আছে। আর তার পিছনে আছে এক ইতিহাস।সেই গল্পই বলবো।
ব্যতিক্রম হলেন ব্রিটেনের রানী। তাঁর জন্মদিন যে দু’টি, সেকথা জানেন কি? জন্ম সময়ের হিসাবে তিনি ৯৪ বছরে পা দিলেন এপ্রিলের ২১ তারিখ। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর ৯৪ বছর বয়স হতে এখনও দেরি আছে। জুন মাসে হবে তাঁর জন্মদিনের অনুষ্ঠান। মহারানি এলিজাবেথের এই ব্যবস্থা তাঁর সিংহাসন আরোহণের সময় থেকেই। কিন্তু হঠাৎ ব্যতিক্রম কেন? রানী বলে? না -এর পিছনের ইতিহাস আরো পুরনো।
১৭৪৮ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের রাজা দ্বিতীয় জর্জ জন্মেছিলেন নভেম্বর মাসে। বেশ আমোদে মানুষ ছিলেন দ্বিতীয় জর্জ। তাঁর জন্মদিনে জাঁকজমক করে অনুষ্ঠান পালন করতে চাইতেন তিনি। কিন্তু নভেম্বর মাসে ইংল্যান্ডের আবহাওয়া প্রতিকূল থাকায় কোনো রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান করা সম্ভব হতো না। তাই সিংহাসন আরোহণের পর তিনি নিজের জন্য আরও একটি জন্মদিন বেছে নিলেন। তিনি ইংল্যান্ডের সেনাবাহিনীর বিশেষ কুচকাওয়াজ ট্রুপ দ্য কালারের দিন তাঁর ওই আনুষ্ঠানিক জন্মদিনের সূচনা করেন। সেটি নির্ধারিত হয় জুন মাসের দ্বিতীয় বৃহস্পতিবার। সেই থেকে চলে আসছে এই রীতি।
রানীও সিংহাসনে আরোহনের পর ঐতিহ্য অনুযায়ী তার আনুষ্ঠানিক জন্মদিনটি জুনের দ্বিতীয় বৃহস্পতিবার উদযাপন করতেন তার বাবা রাজা ষষ্ঠ জর্জের সাথেই । কিন্তু সিংহাসনে সাত বছর থাকার পর ১৯৫৯ -এ রানী সুবিধার জন্য এই জুন মাসের দিনটি পরিবর্তন করে দ্বিতীয় শনিবার করেন। ইংল্যান্ডের রাজপরিবারে মহারাজ বা মহারানির এখনও দুটি করে জন্মদিন পালন হয়। একটি তাঁর প্রকৃত জন্মদিন ২১শে এপ্রিল যেদিন তিনি তাঁর পরিবার ও একান্ত নিকট আত্মীয়দের সঙ্গে সময় কাটান। প্রতিবছর রীতি মেনেই ওই দিন মূলত ৪১টি গান স্যালুট হাইড পার্কে, ২১টি গান স্যালুট উইন্ডসর গ্রেট পার্কে এবং ৬২টি গান স্যালুট লন্ডন টাওয়ারে দিয়ে রানীকে সম্মান জানানো হয়।আর আনুষ্ঠানিক জন্মদিনকে (জুন মাসের দ্বিতীয় শনিবার ) ঘিরে রাজবাড়িতে বহু মানুষের সমাগম ঘটে। বিদেশ থেকেও আসেন অতিথিরা। রীতি মেনেই ইংল্যান্ডের সেনাবাহিনী বিশেষ কুচকাওয়াজ ট্রুপ দ্য কালারে অংশ নেয়। এই প্যারেডে ১৪০০ সৈন্যের এক দল, ২০০টি ঘোড়া, ৪০০ বাদ্যযন্ত্রী শোভাযাত্রা করেন, রানী প্যালেসের বারান্দা দিয়ে স্ব–পরিবারে সেটি উপভোগ করেন।প্রথানুযায়ী মহারাজ বা মহারানি ঘোড়ায় চড়ে ঘুরে দেখেন সেই কুচকাওয়াজ। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ অবশ্য এখন আর ঘোড়ায় চড়তে পারেন না। বয়সের কারণে তিনি এখন ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে ঘোরেন। ওইদিন রাজবাড়ির মাথায় ইউনিয়ন জ্যাক পতাকা তোলা হয়। যুদ্ধবিমান রানীর সম্মাননায় আকাশপথকেই বেছে নেয়, বলতে গেলে, সারা ইংল্যান্ড জুড়ে সেদিন থাকে সাজো সাজো রব।
যদিও এই বছর বিশ্বব্যাপী কোরোনা ভাইরাসের তীব্রতার কারণেই বাকিংহাম প্যালেস কর্তৃপক্ষ জানান অনুষ্ঠানটি রানী নিজেই বাতিল করেছেন । এতো বছরের এই রাজপরিবারের ইতিহাসে এই প্রথম অনুষ্ঠানটি বাতিল হলো। তবে বিকল্প কোনো দিন ধার্য হ্য় কিনা তা পরিস্থিতি নির্ভর। তবে অনেকের জন্মের একাধিক কাগজ থাকলেও নিজেদের রানী বা রাজা ভাবার কারণ নেই। কারণ বাকিদের বিপদ থাকলেও রানী বা রাজার ক্ষেত্রে বিষয়টি স্বীকৃত ও সম্মানের।