প্রণব মুখোপাধ্যায় ছাড়া অসম্পূর্ন মিরিটি গ্রামের মা দুর্গার আরাধনা

তিনি যে বাঙালি সেটা পুরোপুরি এই দুর্গা পুজোতেই বুঝিয়ে দিতেন। এই বিশেষ দিনগুলিতে তিনি পরনে সাদা ধুতি ও গায়ে পাটবস্ত্র উত্তরীয়। সপ্তমীর সকালে কলাবউ স্নান থেকে শুরু করে অষ্টমীর অঞ্জলি, চণ্ডীপাঠ পুরো তাঁর মুখে মুখে। গোটা গ্রামে এই পুজোর দিনগুলিতে থাকতো বিশেষ নিরাপত্তা।

রীতি মেনেই প্রতি বছরের মতো এবারও দুর্গাপুজো হচ্ছে বীরভূমের মিরিটি গ্রামের ‘মুখোপাধ্যায় বাড়ি’তে। কিন্তু সেই বিশেষ মানুষটি আর নেই। প্রণব মুখোপাধ্যায়কে ছাড়া এই পুজো যেন অসম্পূর্ন। ফাঁকা ফাঁকা লাগছে মিরিটির গ্রামটা।

pppprrr

তবে, পুজো হবে। পুরোদমে চলছে পুজোর প্রস্তুতি। সময়মতো তৈরি হয়েছে মায়ের মূর্তির কাঠামো, তাতে মাটিও চড়ে গিয়েছে ইতিমধ্যে। শুধুমাত্র থাকবেন না তিনি। থাকবে না সেই নিরাপত্তার বহর।

২০২০ সালের ৩১ অগাস্ট প্রয়াত হন বর্ষীয়ান রাজনীতিক নেতা ও দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। শুধু মুখোপাধ্যায় পরিবার নয়, সমগ্র মিরিটির মন ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে পুজোর দিনগুলিতে।

রাষ্ট্রপতি হন বা অর্থমন্ত্রী কিংবা বিদেশ মন্ত্রী, হাজারও ব্যস্ততার মধ্যেও প্রতি বছর নিয়ম করে দুর্গাপুজোর সময় গ্রামে আসতেন প্রণববাবু। এলাকা মুড়ে ফেলা হত নিরাপত্তায়।

চারটি দিন বাড়িতে থেকে পুজো পরিচালনা করতেন তিনি । শুধু পরিচালনা নয়, পুরোহিতের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নবপত্রিকা স্নান–সহ দুর্গাপুজোর সমস্ত রীতিনীতি নিজের হাতেই পালন করতেন।

জানা যায় যে, কেবল ১৯৭৮ সালে বন্যার জন্য দুর্গাপুজোয় তিনি আসতে পারেননি মিরিটি গ্রামে।তাই, সেবার ঘটপুজো হয়েছিল।তারপর থেকে প্রণববাবু প্রতিদিন আসতেন গ্রামে।

যতই প্রোটোকল থাক, এই পুজোর চারটে দিন একেবারে গৃহকর্তা হয়েই পুজোয় ব্যস্ত থাকতেন রাখতেন নিজেকে।

প্রতিবছর প্রণববাবু নিজেই করেতেন চণ্ডীপাঠ। কিন্ত সেসব এখন রয়ে গিয়েছে স্মৃতির পাতায়।

সেই চণ্ডীপাঠ  শুধু  গ্রামের মানুষই নন, দেশের প্রত্যেকটি প্রথম সারির ব্যক্তিত্বদের আনাগোনার লাইন পড়ে যেত।

প্রণব পুত্র অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় এই বিষয়ে  জানান, “মুখোপাধ্যায় পরিবারের দুর্গাপুজো ১২৮ বছরে পদার্পণ করল। প্রণব মুখোপাধ্যায়ের ঠাকুরদা তারকনাথ মুখোপাধ্যায় এই পুজোর সূচনা করেছিলেন। বংশ-পরম্পরায় পূজিত হয়ে আসছে দেবী উমা। বাবা প্রয়াত হবার পর বংশের পুজোর দায়িত্বভার পেয়েছি। তবে বাবার মত দক্ষতা অর্জন করতে পারিনি। এবারেও কর্তাহীন, প্রণবহীন দুর্গাপুজো। জ্ঞান হবার পর থেকেই বাবাকেই পুজো করে আসতে দেখেছি। শুধু কয়েকবার সরকারি কাজের জেরে এবং ১৯৭৮ সালের বন্যায় তিনি আসতে পারেননি মিরিটিতে। সেবার ঘটপুজো হয়েছিল। তারপর থেকে আমরা কখনই পুজো থেকে দূরে সরে থাকতে দেখিনি।”

এই সব কিছুই এখন রয়ে গিয়েছে স্মৃতির পাতায়, পুজো থমথমে হলেও তাঁর স্মৃতি আঁকড়ে ধরে চলবে মা দুর্গার আরাধনা।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...