চোখের দৃষ্টি নাই বা থাকল, মনের জোরই আসল কথা! এই জীবন বোধেই নিজের লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন মুর্শিদাবাদের তরণী ঘোষ। জীবনযুদ্ধে তাঁর জেতার অস্ত্র গান। দু’চোখে দৃষ্টি নেই। ক্ষীণ শরীর। তবু জেদে তিনি নাছোড়।
একটা লাঠি আর একটা নাল সঙ্গী করে সত্তর পার করা দৃষ্টিহীন বৃদ্ধ, গ্রামে গ্রামে ঘুরে গান শুনিয়ে মানুষের মন জয় করে চলেছেন। মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দি থানার অন্তর্গত জেমো চকপাড়ায় তাঁর দেখা মেলে। স্থানীয় মানুষ মুগ্ধ তাঁর গানে।
শ্রোতারা গান শুনে যে অর্থ দেন তাই দিয়েই সংসার চলে অন্ধ গায়কের। দীর্ঘ ১০ বছর ধরে তিনি এইভাবেই দিন গুজরান করছেন। বয়সের ভারে শরীর ঝুঁকেছে, কিন্তু গানের গলায় তার প্রভাব পড়তে দেননি। কান্দির বাসিন্দাদের কাছে অত্যন্ত পরিচিত গায়ক তিনি।
কান্দির বাসিন্দা, তরণী ঘোষ জন্ম থেকেই পূর্ণ দৃষ্টিহীন, দু চোখেই দেখতে পান না। তবে নিজেকে প্রতিবন্ধী ভাবতে তিনি নারাজ। এই মনের জোরকে সঙ্গী করেই লড়ে যাচ্ছেন চরম দারিদ্র্যের সঙ্গে।
কলকাতার নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনে গান শিখেছেন। কিন্তু, পরিবারের আর্থিক দুরাবস্থার কারণে গান নিয়ে আর এগোতে পারেননি। মাঝপথেই ছাড়তে হয় গায়ক হয়ে ওঠার স্বপ্ন। অন্ধত্বের কারণে কায়িক পরিশ্রমের পেশাকেও বেছে নিতে পারেননি।
স্ত্রী, তিন ছেলে এক মেয়েকে নিয়ে তাঁর পরিবার। গান শুনিয়ে যা আয় হয় সেই অর্থেই চলে সংসার। তাঁর কাঁধেই সব দায়িত্ব।
তিনি জানিয়েছেন, বহু মানুষ তাঁকে ভালবাসেন। তাই মনের জোরেই গান গেয়ে এইভাবে সংসার চালিয়ে যাচ্ছেন। ভুবন বাদ্যকর, রানু মণ্ডলের মতো ভাইরাল হতে পারেনি বলে তাঁর জীবনে কোনও আক্ষেপ নেই, কারণ তিনি মানুষের মন জয় করেছেন। মানুষ তাঁর গান শুনে আনন্দ পায়, আর শ্রোতাদের আনন্দ দিয়ে তিনি নিজেও খুশি হয়ে থাকেন।
তাঁর ছেলেমেয়েরা সেভাবে কর্মক্ষম নয়। পুরো সংসারটাই চলে তাঁর একার আয়ে। দীর্ঘদিন তাঁর ভোটার কার্ড ছিল না, তাই প্রতিবন্ধী ভাতাও পেতেন না। কিছু দিন আগে নতুন করে ভোটার কার্ড পেয়েছেন, এখন প্রতিবন্ধী ভাতাও পাচ্ছেন। তিনি সকল মানুষের কাছে আবেদন জানান যাতে তাঁকে একটু সাহায্য করা হয়।