লাই-ফাই জগত

আচ্ছা যদি এমন হয় যে, লাইট জ্বালালেই ইন্টারনেট সংযুক্ত হয়ে কোনো বাফারিং ছাড়াই চোখের পলকে ডাউনলোড হয়ে যায় গোটাকতক বড়সড় সিনেমা, শ-খানেক গান বা পৌঁছে যায় গুচ্ছ খানেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চোখের পলকে তাহলে? এত তারের জঙ্গল যদি না থাকে? অবাক লাগছে? কল্পনা নয়- ঘোর বাস্তব, এমন ঘটনা সফল ভাবে ঘটছে। কোথায়? কিভাবে? জানাব সব।
                         
বর্তমান বিশ্ব ইন্টারনেট ব্যবস্থার ৬০% তথ্য আদান-প্রদান করা হয় Wi-Fi ব্যবহার করে। কিন্তু Wi-Fi -এর নানা জটিলতা, দুর্বল নিরাপত্তা সহ এই প্রযুক্তির বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এই সমস্যার সমাধান কল্পে উদ্ভাবন করা হয়েছে Li-Fi প্রযুক্তি। আলোকে কাজে লাগিয়ে ইন্টারনেট বা তথ্য আদান প্রদানের ব্যবস্থাকেই বলাহয় Li -Fi প্রযুক্তি। Li-Fi  খুবই নিরাপদ, সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী।
                         
বর্তমানে Wi-Fi তথ্য আদানপ্রদানের জন্য রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করা হয়। অন্যদিকে এই Li -Fi প্রযুক্তি গড়ে উঠেছে আলোক তরঙ্গকে কেন্দ্র করে। আলোর বর্ণালী রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি থেকে ১০হাজার গুন বেশী দ্রুত চলাচল করতে পারে অর্থাৎ এর মাধ্যমে অতি স্বল্প সময়ে অনেক বেশি তথ্য সরবরাহ করা সম্ভব। আলোর এই ধারণাকে কাজে লাগিয়ে এই Li-Fi প্রযুক্তির অবতারণা হয়েছে।
                        
যদিও ২০১১ সালে এই প্রযুক্তির  উদ্ভাবন করেন এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এরাল্ড হ্যাস। ২০১২ সালে ডঃ মোস্তাফা আফগানের সাথে Pure Li-Fi Limited নামে এই প্রযুক্তির প্রথম কোম্পানি গড়ে তোলেন।
                            
আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই আমাদের ঘরের লাইট বাল্ব শুধু আলো দেবে না, ইন্টারনেটকেও সংযোগ করবে। এক্ষেত্রে মনে হতে পারে যে, লাইট বন্ধ করলে ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন হবে কি? বিষয়টি তা নয়।  প্রয়োজনমতো Li-Fi এর আলোর তীব্রতা এতটা কমানো যাবে যে খালি চোখে কোনো আলো দেখা না গেলেও ইন্টারনেট থাকবে নিরবচ্ছিন্ন।
                          
গবেষকরা ইতিমধ্যেই Li-Fi ব্যবহার করে প্রতি সেকেন্ডে ১০ গিগাবাইট তথ্য আদান প্রদানে সক্ষম হয়েছেন। এস্তোনিয়ার এক অফিসে বাণিজ্যিকভাবে Li-Fi ব্যবহার হচ্ছে। এছাড়া অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক LED Bulb এর সাহায্যে ২২৪ গিগাবিট /সেকেন্ড গতির ইন্টারনেট ব্যবহার করছে, যাতে ১.৫ GB এর ১৮টি সিনেমা স্বচ্ছন্দে ডাউনলোড হতে পারে মাত্র ১ সেকেন্ডে। যা শুধু বিস্ময়কর নয়, কার্যকরীও বটে। 

বর্তমানে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি অধিক ব্যবহারের ফলে সৃষ্টি হয়েছে Spectrum Crunch, ফলে ক্রমাগত ভবিষ্যতে wii-fi তার কার্যকারিতা হারাবে। Li-Fi যেহেতু কোনো রেডিও তরঙ্গ ব্যবহার করে না তাই এই ধরণের কোনো সমস্যা থাকবে না। এছাড়া Wi Fi -এর ক্ষতিকারক বিকিরণ থেকে মুক্ত হওয়া যাবে এবং এটি সহজে হ্যাক করা যাবে না।  তথ্য প্রদানে থাকবে বাড়তি নিরাপত্তা। এর মাধ্যমে ইন্টারনেট অনেক দ্রুত, নিরাপদ ও নির্ভুল হবে। আর এই দ্রুতগতির অভিনব প্রযুক্তির ব্যবহার শুধু সময়ের অপেক্ষা। খুব শীঘ্রই ৫জি সহ দ্রুতগতির ওয়্যারলেস ইন্টারনেটের বাহন হতে চলেছে Li-Fi।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...