৫০০ বছর আগের সভ্যতা এখনো অক্ষত !

জানেন  কি !  পঞ্চদশ  শতাব্দীর   এক  দুর্গ  নগরী  আজও  অক্ষত  রয়েছে  এবং  তার  আশ্চর্য  অবকাঠামোর  জন্য   সে  পৃথিবীর  নতুন  সপ্তম  আশ্চর্যের  তালিকায়   জায়গা   করে   নিয়েছে !  কোথায় ?  আজ   সেই   তথ্যই  দেব ।

এই   নতুন   আশ্চর্য   হলো   পেরুর  আন্দিজ   পর্বতমালার   উরুবাম্বা   উপত্যকার   এক  পাহাড়ের   চূড়ায়   অবস্থিত  পঞ্চদশ   শতাব্দীর    দুর্গ  নগরী   মাচু-পিচু ।  সমুদ্রপৃষ্ঠ  থেকে  প্রায়   ৮ হাজার   ফুট   উচ্চতায়   থাকা  এই  নিদর্শনটি , ইনকাদের   হারানো   শহর  নামে   পরিচিত।   এই   শহর  আবার  সূর্য  নগরী   নামেও  খ্যাত  ছিল।  সে  ব্যাখ্যায়  আসছি  পরে ।  

এবার   বলি   এই   শহরের   এমন   নামের অর্থ ।   কেচুয়া   ভাষায়   ‘মাচু’   শব্দের   অর্থ   বৃদ্ধ -পুরোনো  ও  ‘পিচু’  অর্থাৎ শক্ত   ত্রিকোণ   শংকু – পর্বতের  আকারানুযায়ী পুরোনো   পর্বত   হিসেবে  এই   নামকরন ।   পাথুরে   শহর    মাচু-পিচু  পৃথিবীর   অন্যতম   আকর্ষণীয়   প্রত্নতাত্বিক  নিদর্শন ।  পেরুর  উত্তর  পশ্চিমে  অবস্থিত  এই  শহর  ইনকা   সভ্যতার সৃজনশীলতা  ও  শক্তির   উৎকৃষ্ট   উদাহরণ ।  ইনকাদের   স্বর্ণযুগে   এই   সভ্যতা   বর্তমানকালের   ইকুয়েডর   থেকে   চিলি  পর্যন্ত   প্রায়   ৪ হাজার  কিলোমিটারের   বেশি   অঞ্চল  জুড়ে  বিস্তার  লাভ  করেছিল ।  মাচু-পিচুর  অবস্থান  ছিল  সেই ইনকা  সভ্যতার  এক্কেবারে  কেন্দ্রবিন্দুতে।  পঞ্চদশ  শতাব্দীর  মাঝামাঝি   নির্মিত  এই  শহর   এখনো  পর্যন্ত   টিকে  থাকা সবচেয়ে   সুরক্ষিত   ইনকা  স্থাপনা ।  এর   প্রাসাদ  ও  মন্দিরসহ  সবরকমের  অবকাঠামো  ইনকারা  তৈরী  করেছিল পাথরের সাহায্যে।  অবিশ্বাস্য   নৈপুণ্যে  তারা  পাথর  কেটে   জোড়া   দিয়েছে ।   ভূমিকম্প   প্রবন   এলাকায়   অবস্থিত   হলেও  পাথরের বিশেষ  ধরণের  কাটিঙের   কারণে   ভূমিকম্পের   সময়   পাথরগুলো  শুধু   নিজেদের   জায়গায়    নড়ে   তবে  ধসে   পড়ে না ।  আর  তাই  এই   বিস্ময়কর  শহর  ৫০০ বছর  পরেও  অক্ষত  রয়েছে ।

এই   দুর্গ   নগরী   ইনকাদের   রাজধানী   কুউস্ক   থেকে  মাত্র   ৮০  কিলোমিটার  দূরে অবস্থিত  ছিল ।  ইনকারা  ঠিক কি উদেশ্য   নিয়ে  এই  শহর  ব্যবহার  করতো   তা  আজ  গবেষণাধীন।   তবে  অধিকাংশের  মতে,  এটি   ইনকা  সম্রাট পাচাকুতির   একটি  এস্টেট  হিসেবেই   নির্মিত   হয়েছিল।  মাচু-পিচুতে   ইন্তিওয়ানা   নামে   ইনকাদের   ব্যবহৃত   একটি  মহাকাশ  ঘড়ি   পাওয়া    গেছে ।   যা   ধর্মীয় ,  আধ্যাত্বিক ও   জ্যোতির্বিদ্যা   সংক্রান্ত   কাজে   ব্যবহার  করা   হতো।  

ইনকারা   ছিল   সূর্যের   পূজারী   তাই এই   নগরীর   এক   বিশেষ  জায়গা  হলো  সূর্যমন্দির।  এই   কারণেই   অনেকের কাছে  এই   শহর    সূর্য নগরী   নামেও   খ্যাত   ছিল।  ১৪৫০ এ  মাচু-পিচু   নির্মাণের   প্রায়   ১০০ বছর   পর   ইনকারা  এই শহর  পরিত্যাগ  করে।  তাদের  কোনো   লিখিত  ভাষা  না  থাকার   কারণে   এই   সংক্রান্ত   কোনো   লিখিত  প্রত্নবস্তু বা প্রমান   আজও  পাওয়া  যায়নি ।   ষোড়শ   শতকের  পর  থেকে  স্প্যানিশরা   ইনকা   সভ্যতার  অঞ্চলগুলো  দখল  করে  নিতে   থাকে ।  কিন্তু   তারা   মাচু-পিচু  সম্পর্কে  কিছু  জানত  না।  ১৯১১ সালে  এক   স্থানীয়  কৃষকের   সহায়তায়  ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের   এক   অধ্যাপক   হীরাম   বিংহাম   এই   মাচু-পিচুকে   নতুন   করে   বিশ্বের   সামনে তুলে   ধরেন। 

দুর্গম   পাহাড়ি  পরিবেশে  অবস্থিত  এই   দুর্গ নগরী  পৃথিবীর  অন্যতম  গুরুত্বপূর্ণ  প্রত্নতাত্বিক  নিদর্শন  হিসেবে  সগর্বে দন্ডায়মান।  ১৯৮৩ তে  উনেস্কো  মাচু-পিচুকে  বিশ্বের   ঐতিহ্যবাহী  স্থানের  মর্যাদা   দিয়েছে ।   ২০০৭ এ  পৃথিবীর   সপ্তম  আশ্চর্যের  তালিকাভুক্ত   হয়   সে ; বর্তমানে   প্রতি   বছর  বিপুল  পরিমান  পর্যটক  এই  শহরে  ভ্রমণ  করেন – পৃথিবীর  অন্যতম  আশ্চর্যের  টানে ,   হারানো  সভ্যতার  সন্ধানে ,   সর্বোপরি   ইতিহাসের   টানে ।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...