রাখিতে ভাইকে ‘নতুন জীবন’ দিলেন দিদি নিজের লিভার দান করে

ভাই এবং বোনের মধ্যে পবিত্র সম্পর্কের উৎসব হল রাখি বন্ধন উৎসব। এই দিন বোনরা তাঁদের ভাইদের কল্যাণের জন্যে তাঁদের হাতে রঙিন রাখি বাঁধে। এই দিন দুজনেই প্রতিশ্রুতি দেয় কঠিন পরিস্থিতিতে একে অপরের পাশে দাঁড়ানো। 

রাখিবন্ধনের আগেই ভাইকে এক ‘নতুন জীবন’ উপহার দিলেন তাঁর দিদি। হ্যাঁ, বাস্তবে এক বোন নিজের ঝুঁকি নিয়ে রক্ষা করলেন তাঁর ভাইকে। ২১ বছরের দিদি, নন্দিনী পটেল নিজের লিভার দান করে ১৭ বছরের ভাই, রাহুলকে ফিরিয়ে আনলেন মৃত্যুর মুখ থেকে। এই ঘটনাটি মহারাষ্ট্রের পুনে এলাকায় ঘটেছে।

raksha-16932482973x2_11zon

জানা গিয়েছে, পুনের এক বাসিন্দা সন্তোষ পটেল নামে একটি বেসরকারি সংস্থায় নিরাপত্তা রক্ষী হিসেবে কাজ করেন। তাঁর স্ত্রী গৃহকর্মী সহায়িকার কাজ করেন। তাঁদেরই দুই সন্তান হচ্ছে নন্দিনী এবং রাহুল। বড় মেয়ে, নন্দিনী এখন কলেজে পড়েন। ছোট ছেলে রাহুল, দশম শ্রেণীর ছাত্র। কষ্ট করে ছেলেমেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়ে স্বনির্ভর করার লড়াই করছিলেন এই পটেল দম্পতি।

ঠিক তখনই তাঁদের জীবনে নেমে এসে ছেয়ে পড়ে কালো অন্ধকার। হটাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পরেছিল ছোট ছেলে রাহুল। ভয় পেয়ে যান গোটা পরিবার। রাহুলের মুখে একটা ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট হতে দেখা যায়। তারপরে আরও চিন্তায় ফেলে রাহুলের রক্তবমি দেখে। 

পরিস্থিতির অবনতি হতে দেখে চিকিৎসকের পরামর্শ নেন তাঁরা। নভি মুম্বইয়ের এক হাসপাতালে ভর্তি করে হয়। জানা যায় রাহুল অটোইমিউন লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। এই রোগে শরীরের ইমিউন সিস্টেম সরাসরি লিভারের কোষগুলিকে আক্রমণ করে। সাধারণত অটোইমিউন লিভার সিরোসিস প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে শুধু ওষুধ দিয়েই চিকিৎসা করা যেতে পারে। কিন্তু রাহুলের ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয় করতে দেরি হয়েছে বলে জানিয়ে দেন চিকিৎসক বিক্রম রাউত। রাহুলের শারীরিক অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে যায় যে তার পেটের ভিতর রক্তক্ষরণ শুরু হয়ে যায়।

চিকিৎসকেরা জানান যে লিভার প্রতিস্থাপন ছাড়া কোনও উপায় নেই রাহুলকে বাঁচানোর। প্রাথমিক ভাবে মায়ের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু কিছু শারীরিক সমস্যা থাকার কারণে তিনি অঙ্গদানে সমর্থ্য নন বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। সেই পরিস্থিতিতে ২১ বছরের দিদি নন্দিনী এগিয়ে আসে ভাইয়ের জীবন বাঁচানোর জন্য। সব পরীক্ষার পর জানা গেল নন্দিনীর লিভারের অংশ রাহুলের শরীরে প্রতিস্থাপন করতে কোনও সমস্যা হবে না।

তবে চিকিৎসার খরচ সামলানো সম্ভব হচ্ছিল না তাদের। সেক্ষেত্রে এগিয়ে আসেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। চলতি বছর ২৬ জুন সফল অস্ত্রোপচার করা হয় তাঁদের।

নন্দিনী বলেন, ‘আমার ভাই-ই আমার কাছে পৃথিবী। এই বছরের রাখি পূর্ণিমায় তাঁকে সবচেয়ে মূল্যবান উপহার দিতে পেরে আমি খুশি।’ বিনিময়ে এবার রাখি পূর্ণিমায় নন্দিনীর হাতে রাখি বাঁধবেন রাহুল।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...