এখন আর মহালয়াতে মা রেডিয়ো চালায় না

শুভম দত্ত

বেহালা

 

“বাংলার মানুষের বারো মাসে তেরো পার্বণ” কথাটি সত্য। সারা বছর জুড়েই বাঙালির কিছু না কিছু উৎসব লেগেই থাকে। তবে এত সব উৎসবের মধ্যেও যেটি বাঙালির কাছে সবচেয়ে বেশি প্রিয় এবং অন্তরের উৎসব তথা বাঙালি জাতির সার্বজনীন, তা হল দুর্গোৎসব।

 

blog-suvam

 

ছোটবেলা থেকেই দুর্গাপুজোকে ঘিরে আমাদের নানান স্মৃতি জড়িয়ে আছে, তবে বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দুর্গাপুজো নিয়ে আমাদের অনুভূতি ও ভাবনাগুলো একটু একটু করে বদলে গিয়েছে। চারটে দিনের আনন্দ রয়েছে ঠিকই, কিন্তু আনন্দের কারণগুলো বদলে গিয়েছে। ছোটবেলার পুজোর স্মৃতি তবে বেশ প্রিয়। পুজোর চারদিন কোনও পড়াশোনা করতে হত না। তখন পঞ্চমীর দিন পর্যন্ত স্কুল হত, হাফ ইয়ারলি পরীক্ষা শেষ হত সেই দিন, আর আমরা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতাম। বাড়ি ফেরার পথে রাস্তায় মণ্ডপ দেখতে দেখতে আসা আর ঘরে ঢুকেই হাতে ক্যাপ-বন্দুক নিয়ে ক্যাপ ফাটানো শুরু। আমাদের সবারই একটা ক্যাপ বন্দুক ছিল ছোটবেলায়। একটা করে ক্যাপের বাক্সও ছিল। সেটাই বন্দুকে ফিট করে নিতাম। প্রতি বছর পুজোর একটা নতুন বন্দুক লাগবেই। যদিও এখন বাচ্চাদের মধ্যে সেই চল আর দেখতে পাওয়া যায় না। পুজোর চারটে দিন সবার সঙ্গেই বেশ কাটত। একদিন স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে বেরোনো, একদিন বাবার সঙ্গে, একদিন মা , বাবা আমি এবং বেশ কিছু আত্মীয়স্বজন মিলে সারারাত ঠাকুর দেখা।

blog-suvam-1

দশমী এলে মন কেমন লাগত ঠিকই তবে মা ঘুগনি বানালে নিমকি দিয়ে সেটা সবার আগে আমি খেয়ে দেখতাম! আর একটা জিনিস যেটা না বললেই নয়, সেটা হল মহালয়াতে মা আমার আগে ঘুম থেকে উঠে সবাইকে ঘুম থেকে তুলে রেডিয়োতে মহালয়া চালাত।

 "আশ্বিনের শারদপ্রাতে বেজে উঠেছে আলোক মঞ্জীর" শুনে ঘুম ভেঙে যেত। এখন আর মহালয়াতে মা রেডিয়ো চালায় না। দশমীতে ঘুগনিও বানায় না।  আজ ৩ বছর হল মা নেই...

blog-suvam-2

এখন ক্যাপ বন্দুক ফাটাতে ইচ্ছে হলেও সম্ভব হয়না। এখন পুজো মানে অফিসের কাজ থেকে কোটা দিন মুক্তি, বাড়িতে বসে আরাম করা, সিনেমা দেখা, পরিবারের সঙ্গে  সময় কাটানো ও নতুন জামা পরে সবার সঙ্গে বা প্রিয় মানুষটার সঙ্গে পুজো কাটানো! তবে যতই যাই হোক, ছোটবেলার কাটানো পুজোর মুহূর্তগুলো একবার যদি ফিরে পাওয়া যেত! একবার যদি আবার ছোট হতে পারতাম!

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...